প্রতি বৎসর বিভিন্ন দিনে বিশ্বব্যাপী নানা দিবস পালিত হয়। এর মধ্যে কিছু জাতীয় দিবস এবং কিছু আন্তর্জাতিক দিবস রয়েছে। এই সকল দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে জাতীয়ভাবে বা আন্তর্জাতিকভাবে সাম্প্রতিককালের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। ক্ষেত্রবিশেষে কোন অতীত ঘটনা স্মরণ বা উদযাপন করা। সাধারণত প্রতিটি দিবসেই প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয় যা দিবসটির ভূমিকাকে সর্বসমক্ষে আরও গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ করে তোলে। এসকল জাতীয় দিবস বা আন্তর্জাতিক দিবস সমূহের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার লক্ষে বিদ্যাঘরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পোস্ট দেয়া হয়। আজকে আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
মাতৃভাষা কি
মায়ের মুখ থেকে শোনা প্রচলিত শব্দ যখন শিশুর মনের ভাব প্রকাশ করার সহজতর ও অভ্যস্ত মাধ্যম হয় তখন তাকে মাতৃভাষা বলে। অর্থাৎ মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহন করার পর শিশু তার স্বাভাবিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করে তা হল মাতৃভাষা। শিশু তার মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী প্রভৃতির কাছ থেকে স্বাভাবিক অনুকরণ এর সাহায্যে মাতৃভাষা আয়ত্ত করে। ছোটবেলায় যে ভাষা মায়ের স্নেহ ভালবাসায় শিখে বড় হয় সে ভাষায় জীবনের পরম সুখ দুঃখের অভিব্যক্তির বাহন হয়ে যায়। মাতৃভাষায় সামাজিকতার বন্ধন সুদৃঢ় হয়। সমাজে মেলামেশা করতে গেলে সচরাচর যে ভাষার প্রয়োজন হয় তা হল মাতৃভাষা। মাতৃভাষা জাতীয় ও বংশগত ঐতিহ্যের ধারক বা বাহক।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কি
পৃথিবীতে বহু জাতি ও ভাষার মানুষ রয়েছে। সকলেই নিজ নিজ মাতৃভাষায় কথা বলে। কিন্তু পৃথিবীর সর্বপ্রথম দেশ হলো বাংলাদেশ যারা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। তাই পৃথিবীর সকল জাতিকে নিজ নিজ মাতৃভাষার গুরুত্ব বুঝাতে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। এই দিনে সকলেই নিজ নিজ মাতৃভাষাকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে পালন করে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর ইতিহাস
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন। ফলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শুরু হয় তীব্র গণআন্দোলন। আন্দোলনরত ছাত্রসমাজ ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে সরকারের নির্দেশে পুলিশ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ নাম না জানা অনেকে নিহত হয়। অতঃপর ক্রমাগত আন্দোলনের ফলে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ শহীদদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০১ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বব্যাপী প্রথম পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরব যুক্ত ঐতিহাসিক দিন। আমাদের জাতীয় জীবনে এই দিনটির তাৎপর্য অপরিসীম।
দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয়। বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য বিষয় সামনে রেখে দিবসটি পালন করা হয়। প্রতিপাদ্য বিষয় প্রতি বছর বিভিন্ন হয়ে থাকে। বিগত বছর এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “শিক্ষা ও সমাজে অন্তর্ভুক্তির জন্য বহুভাষিকতা উৎসাহিত করা”।
দিবসটি যেভাবে পালিত হয়
১৯৫২ সালে রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত সহ আরো অনেকে শহিদ হন। তাই তখন থেকে এ দিনটি জাতীয় শহিদ দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। বর্তমানে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা এক মিনিটে রাষ্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এসে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। এ সময় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি, আমিকি ভুলিতে পারি এই গানের সুর বাজানো হয়।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২১ শে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত হয়। এদিন শহীদ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে রেডিও, টেলিভিশন এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দেশের সংবাদপত্রগুলিও বিশেষ খবর প্রকাশ করে। বাংলা একাডেমী পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে একুশে বইমেলার আয়োজন করে।
তথ্য সূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়া
২. সরকারী ওয়েবসাইট