ঈদুল ফিতর

ঈদুল ফিতর (عيد الفطر) শব্দটি একটি আরবি শব্দ যার অর্থ “রোজা ভাঙার দিবস”। ধর্মিও পরিভাষায় এই দিনটিকে পুরষ্কারের দিবস হিসেবে বর্ণনা করা হয়। হিজরি বর্ষপঞ্জীর রমজান মাস ব্যাপি সিয়াম পালনের পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিনটিকে মুসলমানরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে আনন্দ উদযাপন করে থাকে। এই দিনটিকেই ঈদুল ফিতর বলা হয়। মুসলমানদের দুটি বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি হচ্ছে “ঈদুল ফিতর” আর অন্যটি হচ্ছে “ঈদুল আযহা”।

ঈদুল ফিতরের ইতিহাস

সব আসমানি ধর্মসহ পৃথিবীজুড়ে সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই বিভিন্ন উৎসব রয়েছে। উৎসব সামাজিক ও আত্মীয়তার শীতল হয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলো সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলে। একই সাথে জাতীয় ঐকের চেতনাও তৈরি করে। একটি জাতীর স্বতন্ত্র পরিচয় সত্ত্বা তৈরি করতে, তাদের মধ্যে ঐক্যের চেতনা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করতে উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম।

রাসূল (সাঃ) যখন মক্কা থেকে হিযরত করে মদিনায় গেলেন তখন সেখানে জাহেলি যুগ থেকে দুটি উৎসবের দিন ছিল। একটি শরতের পূর্ণিমায় ‘নওরোজ’ এবং অপরটি বসন্তের পূর্ণিমায় ‘মেহেরজান’। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন এই দুটি দিন কিসের? মদিনাবাসী সাহাবিরা বললেন, “আমরা জাহেলি যুগ থেকে এই দুই দিন আনন্দ উৎসব ও খেলাধুলা করে থাকি”। রাসূল (সাঃ) বললেন, “আল্লাহ তায়ালা তোমাদের এই দুই দিনের বদলে নতুন দুটি উৎসবের দিন দিয়েছেন। একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর ও অন্যটি হচ্ছে ঈদুল আযহা” (মুসনাদে আহমদ ১৩০৫৮)। এভাবেই মুসলমানদের পৃথক ধর্মীয় উৎসবের সূচনা হয়। এটা ২য় হিজরির (৬২৪ খ্রীঃ) ঘটনা। রাসূল (সাঃ) বলেন, “সব জাতিরই ঈদ বা উৎসবের দিন থাকে, এটা আমাদের ঈদ” (সহিহ বুখারি ৩৯৩১, সহিহ মুসলিম ২০৯৮)।

যেভাবে পালন করা হয় ঈদুল ফিতর

ঈদুল ফিতরের একটি ওয়াজিব বা আবশ্যিক আমল হল ঈদের নামাজ (নামাজ একটি ফারসি শব্দ এর আরবি হচ্ছে সালাত)। সাধারণত ঈদ উৎসব শুরু হয় এই নামাজের মাধ্যমে। ঈদের নামাজে ধনী-গরিব, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান এক কাতারে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহত্ব ঘোষণা করে থাকে। রাসূল (সাঃ) নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই ঈদের জমাতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেন, “ঈদের দিন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বলেন, তারা আমার ফরজ আদায় করে প্রার্থনার জন্য বের হয়েছে। আমার মর্যাদা, বড়ত্ব ও সম্মানের কসম, আমি অবশ্যই তাদের প্রার্থনা কুবুল করব। তারপর আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ফিরে যাও আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। তোমাদের পাপগুলোকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছি। এরপর সবাই ক্ষমা প্রাপ্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যায় (বায়হাকির সূত্রে মেশকাত, অধ্যায়ঃ হায়াতুল মুসলিমিন)।”

ঈদের আরেকটি আবশ্যিক আমল হলো সদকাতুল ফিতর। ধনী দরিদ্র সবার মাঝে ঈদের আনন্দ সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে সামর্থবান ও সচ্ছল মুসলমানদের উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “রাসূল (সাঃ) বলেছেন, রোজাকে অশ্লিল ও বেহুদা কথা-আচরণ থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে এবং দরিদ্রদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য সদকাতুল ফিতরকে ফরজ করা হয়েছে।” (সুনানে আবু দাউদ ১৬০৯)

তাছাড়া ঈদের উৎসবে মুসলমানরা আত্মীয়- স্বজন ও প্রতিবেশীদের খুজ খবর নেওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। সকলে ঈদের দিন নতুন জামা কাপড় পড়ে আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যায় এবং মিষ্টি, সেমাই, পায়েশ দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হয়।

সুদীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর এই অবসর যাপন ও বিনোদন মুসলমানদের জীবনে এক অনাবিল আনন্দ ও প্রাশান্তি নিয়ে আসে। ধনী-গরিব, ছোট-বড় সকলের মাঝেই ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্বের প্রভায় উজ্জ্বল হয়ে উঠে কয়েকটি দিন।

তথ্যসূত্রঃ

উইকিপিডিয়া, জাতীয় সংবাদ পত্রিকা, বিভিন্ন পুস্তিকা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।