প্রতি বৎসর বিভিন্ন দিনে বিশ্বব্যাপী নানা দিবস পালিত হয়। এর মধ্যে কিছু জাতীয় দিবস এবং কিছু আন্তর্জাতিক দিবস রয়েছে। তার মধ্যে জাতীয় বীমা দিবস একটি। এই সকল দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে জাতীয়ভাবে বা আন্তর্জাতিকভাবে সাম্প্রতিককালের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। ক্ষেত্রবিশেষে কোন অতীত ঘটনা স্মরণ বা উদযাপন করা। সাধারণত প্রতিটি দিবসেই প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয় যা দিবসটির ভূমিকাকে সর্বসমক্ষে আরও গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ করে তোলে। এসকল জাতীয় দিবস বা আন্তর্জাতিক দিবস সমূহের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার লক্ষে বিদ্যাঘরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পোস্ট দেয়া হয়। আজকে আমরা ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
বীমা কি??
বীমা হলো একটি চুক্তি। ইহা দুই পক্ষের মধ্যে একটি আইন সম্মত চুক্তি। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিবে বলে নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। অন্যপক্ষ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। প্রথম পক্ষ বীমাকারী এবং দ্বিতীয় পক্ষ বীমাগ্রহীতার মধ্যে যথাক্রমে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং প্রিমিয়াম প্রদানের নিশ্চয়তা সম্বলিত একটি চুক্তি। জীবন বীমার ক্ষেত্রে ক্ষতি পূরণ হয় না, মানুষের জীবনের কোন মূল্য পরিমাণ করা যায় না। তাই জীবন বীমার ক্ষেত্রে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করা হয়ে থাকে।
প্রিমিয়াম কি এবং প্রিমিয়াম কেন প্রয়োজন
বীমা চুক্তিতে বীমাকারী বীমা গ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ বা দাবী পরিশোধের প্রতিশ্রুতির প্রতিদানই হচ্ছে বীমা প্রিমিয়াম। অর্থাৎ বীমাচুক্তি বলে বীমাকারী বীমা গ্রহীতার নিজের বা অন্যের জীবন অথবা সম্পত্তির উপরে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য কোন অনিশ্চয়তা বা বিপদজনিত আর্থিক ক্ষতি লাঘব বা পূরণ করে দেয়া অথবা যথারীতি বীমা দাবি পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদানের বিনিময়ে বীমা গ্রহীতার কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে বা নির্দিষ্ট সময় পর পর একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত অথবা এককালীন অর্থ গ্রহণ করে, তাকেই বীমার কিস্তি বা প্রিমিয়াম বলা হয় । বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আদায়কৃত প্রিমিয়াম থেকে প্রাপ্ত অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে । সেই বিনিয়োগের লাভ থেকেই তারা বীমা পরিচালনা করে থাকে।
বীমা দিবস কি
জাতীয় বীমা দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি জাতীয় দিবস। জাতীয় বীমা দিবস ১ মার্চ। বীমা শিল্পের উন্নয়ন ও বীমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার এটি প্রবর্তন করে।
বীমা দিবসের ইতিহাস
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সাল থেকে আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ জারি হওয়ার কারণে দেশে রাজনীতি বন্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধু আপাতমস্তক একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার পক্ষে রাজনীতি না করে থাকা সম্ভব ছিল না। এ অবস্থায় তিনি আলফা ইন্স্যুরেন্সে যোগ দিয়ে চাকরির আবরণে রাজনীতি করতেন। তাঁর এ যোগদানের দিনটিকে জাতীয় পর্যায়ে স্মরণীয় রাখতে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সুপারিশক্রমে প্রতিবছর ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। ওই বছরের ১ মার্চ এটি প্রথম দিবস হিসেবে পালিত হয়।
বীমা দিবসের কর্মসূচী
বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বীমাশিল্পের উন্নয়ন, বীমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে শোভাযাত্রা, বীমামেলা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি পালিত হয়।
দিবসটির প্রভাব
যেকোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বীমা শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বীমা জনসাধারণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় (প্রিমিয়াম) সংগ্রহ করে মূলধন গঠনে সাহায্যে করে। মানুষের জীবন, ঋণ ও সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। এরূপ নিশ্চয়তা পাওয়ার ফলে লোকজন তাদের কার্যক্ষেত্রে নিরাপত্তা অনুভব করে এবং কার্যে মনোনিবেশ করতে পারে। ফলশ্রুতিতে, ব্যক্তিক উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এভাবে ব্যক্তিক উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জনসাধারণের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয় এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে।