মনের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম ভাষা। মানুষের মুখে উচ্চারিত অর্থবোধক ও মনোভাব প্রকাশক ধ্বনি সমষ্টিকে ভাষা বলে। ব্যাকরণ ভাষার অনুগামী অর্থাৎ ভাষা আগে ব্যাকরণ পরে। ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলো হলো – অর্থদ্যোতকতা, মানুষের কন্ঠনিঃসৃত ধ্বনি এবং জনসমাজে ব্যবহার যোগ্যতা।
বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ
পৃথিবীর সকল ভাষাগুলোকে কয়েকটি ভাষা পরিবারে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার একটি। বাংলা ভাষা সহ এশিয়ার প্রায় সকল ভাষাই এই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য। এই ভাষাগোষ্ঠীর ২টি শাখা রয়েছে যথা- কেন্তুম ও শতম। এশিয়ার হিত্তিক ও তুখারিক ভাষা দুটি কেন্তুম শাখার অন্তর্গত। এছাড়া এশিয়ার বাকি সকল ভাষা শতম শাখার অন্তর্গত।
ভারতীয় উপমহাদেশর আঞ্চলিক ভাষাগুলোর আদিম উৎস অনার্য ভাষা। আর্যদের আগমনের পর অনার্য ভাষা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। আর্যদের ভাষার নাম প্রাচীন ‘বৈদিক ভাষা’। আর্যভাষা তিনটি স্তরে বিভাজিত। যথা-
ক) প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা। – বৈদিক ও সংস্কৃত।
খ) মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষা। – পালি, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ।
গ) নব্য ভারতীয় আর্য ভাষা। – বাংলা, উড়িয়া, হিন্দি, মারাঠি ইত্যাদি।
বাংলা ভাষার মূল উৎস প্রাকৃত ভাষা। প্রাকৃত শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো স্বাভাবিক এবং ভাষাগত অর্থ হচ্ছে জনগনের ভাষা। প্রাকৃত ভাষা থেকে দুটি ভাষার সৃষ্টি হয়েছে – একটি ‘পালি ভাষা’ অন্যটি ‘অপভ্রংশ’। বাংলা ভাষা সরাসরি অপভ্রংশের কাছে ঋণী কারণ অপভ্রংশ ভাষা থেকে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র মতে বাংলা ভাষার উদ্ভবের ধারাবাহিক ইতিহাস নিচে দেওয়া হলো-
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা > শতম ভাষা > আর্য ভাষা > প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা > প্রাচীন ভারতীয় আর্য কথ্য > প্রাচীন প্রাচ্য > গৌড়ী প্রাকৃত > গৌড়ী অপভ্রংশ > বঙ্গ-কামরূপী > বাংলা ভাষা ।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লার মতে – গৌড়ীয় প্রাকৃত থেকে।
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে – মাগধী প্রাকৃত থেকে।
নোটঃ বাংলা ভাষার উৎপত্তি মাগধি প্রাকৃত থেকে। এই উক্তিটি করেছেন “জর্জ গ্রিয়ারসন” আর একে সমর্থন করেছেন ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।