বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ কি এবং এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ


বিদ্যাগুচ্ছ – আই সি টি (এইচ এস সি)

বর্তমানে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর হতে চলেছে। তাই বর্তমানের শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার বা মনিটরের পর্দায় পড়াশুনা করতে বেশি আগ্রহী। তাছাড়া অনেকে বই পড়ে সবকিছু বুঝতে পারে না বা বুঝতে পাড়লেও আরো সহজভাবে কিভাবে বুঝা যায় তা খুজার চেষ্টা করে। তাই এইচ এস সি শিক্ষার্থীদের জন্য আই সি টি আরো সহজভাবে ও কম কথায় কিভাবে বুঝানো যায় তার জন্য বিদ্যাঘর “আই সি টি (এইচ এস সি)” নামে একটি বিদ্যাগুচ্ছ পরিচালনা করেছে। তাই আই সি টি সম্পর্কে সহজভাবে সঠিক তথ্য জানতে বিজিট করুন বিদ্যাঘর ওয়েবসাইট পরিচালিত “আই সি টি (এইচ এস সি)” বিদ্যাগুচ্ছটি। বিদ্যাগুচ্ছের এই পাতাটিতে বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ এর ধারণাঃ

বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবালভিলেজ বলতে কি বুঝায় তা বুঝার আগে আমাদের গ্রাম বা ভিলেজ বলতে কি বুঝায় তা বুঝতে হবে।ভিলেজ বা গ্রাম হলো একটি ছোট গোষ্ঠী অথবা কতকগুলো বাড়ির সমষ্টি।নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিত আয়তনে একটি গ্রামের অবস্থান।গ্রামে একজন আরেকজনের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত।যেহেতু সবাই সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে তাই গ্রামে একটি তথ্য প্রকাশিত হলে মুহূর্তেই তা মুখে মুখে জানাজানি হয়ে যায়।গ্লোবাল শব্দের অর্থ হলো বিশ্ব।সুতরাং গ্লোবাল ভিলেজ অর্থ বিশ্বগ্রাম।গ্লোবাল ভিলেজ হলো প্রযুক্তি নির্ভর একটি বিশ্ব যাতে বিশ্বের সবদেশ সবজাতি একটি গ্রামের মতো সুবিধা পায়।গ্লোবাল ভিলেজ এর সংজ্ঞা দিতে গেলে এভাবে বলা যেতে পারে,গ্লোবাল ভিলেজ হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর এমন একটি পরিবেশ যেখানে দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করেও পৃথিবীর সকল মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করার সুবিধা পায় এবং একে অপরকে সেবা প্রদান করে থাকে। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ বলতে সাধারণত এমন একটি ধারণাকে বুঝানো হয় যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন পরস্পর পরস্পরের সাথে সহজ যাতায়াত ও ভ্রমন,গণমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্ত থাকে এবং একক কম্যুনিটিতে পরিণত হয়।বিভিন্ন ধরণের মিডিয়া বিশেষ করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর কারণে আজ এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে ।যোগাযোগ,কর্মসংস্থান,শিক্ষা,চিকিৎসা,গবেষণা,অফিস,সংবাদ,বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক উপাদান বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিশ্বগ্রামের বহুল প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

গ্লোবাল ভিলেজ এর জনকঃ

গ্লোবাল ভিলেজের জনক হলেন হারবার্ট মার্শাল ম্যকলুহান।তিনি একজন কানাডিয়ান দার্শনিক ও লেখক।তিনিই হলেন প্রথম ব্যাক্তি যিনি বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ শব্দটিকে সকলের সামনে তুলে ধরে একে জনপ্রিয় করে তোলেন। ১৯৬২ সালে তার প্রকাশিত The Gutenberg Galaxy:The Making of Typogrphic Man এবং ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত Understanding Media:The Extensions of Man বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বগ্রাম বিষয়টি প্রকাশ করে।তিনি জিবদ্দশায় নানা কাজে নিয়জিত ছিলেন।তার মধ্যে তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা সহ বিজ্ঞাপনের কাজও করেছেন।তবে তিনি বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেন টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর কালচার এন্ড টেকনোলজির প্রধান হিসেবে।এই টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তার প্রথম বইটি প্রকাশিত হয়।

বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহঃ

সুবিধাসমূহঃ

  • বিশ্বের যে কোনো স্থানের যে কোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা যায়
  • ভৌগলিক দূরত্ব কমে যায়
  • অন-লাইনে যে কোন লাইব্রেরি থেকে বই পড়া যায়
  • ঘরে বসেই ব্যবসা বাণিজ্য অর্থাৎ পণ্য বেচা কেনা করা যায়
  • ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসেই বিনোদন করা যায়
  • ঘরে বসেই বিশ্বের নামকরা চিকিৎসকদের সেবা নেয়া যায় ইত্যাদি।

অসুবিধাসমূহঃ

  • হ্যাকিং করে তথ্য চুরি এবং তথ্যের গোপনীয়তা প্রকাশ পায়
  • অসত্য তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে
  • ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়তি করা যায়
  • পর্ণোগ্রাফির মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি করা যায়
  • বেকারত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে
  • প্রযুক্তির বেশি ব্যবহারের ফলে শারিরীক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ইত্যাদি।

বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ প্রতিষ্ঠার প্রধান উপাদানসমূহঃ

বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবালভিলেজ বলতে কি বুঝায় এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

  1. হার্ডওয়্যার(Hardware):বিশ্বগ্রামে যে কোন ধরনের যোগাযোগ ও তথ্য আদান প্রদানের জন্য সর্বপ্রথম যেটি প্রয়োজন তা হলো উপযুক্ত হার্ডওয়্যার সামগ্রী।হার্ডওয়্যার বলতে এখানে কম্পিউটার আর এর সাথে যন্ত্রপাতি,মোবাইল,স্যাটেলাইট এবং তথ্য ও প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত ডিভাইসসমূহ।
  2. সফটওয়্যার(Software):বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠায় সফটওয়্যারের গুরুত্ব অপরিসীম।সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম,ব্রাউজিং সফটওয়্যার,কমিউনিকেটিং সফটওয়্যার এবং প্রোগ্রামিং ভাষা।
  3. ইন্টারনেট সংযুক্ততা(Connectivity):বিশ্বগ্রামের মেরুদন্ড হলো নিরাপদভাবে রিসোর্স শেয়ার করার ইন্টারনেট সংযুক্ততা বা কানেকটিভিটি যার মাধ্যমে বিভিন্ন উপাত্ত ও তথ্য ব্যবহারকারীর নিকট পৌছা।নিরাপদ তথ্য আদান প্রদানই হচ্ছে বিশ্বগ্রামের মূল ভিত্তি।এক্ষেত্রে টেলিকমিউনিকেশন,ইন্টারনেট কানেকশন করা হয়।
  4. ডেটা(Data):ডেটা হলো ঘটনা বা উপাদান যা এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।বিশ্বগ্রামে ডেটা ও তথ্যকে মানুষ তার প্রয়োজনে একে অপরের সাথে শেয়ার করতে পারে।
  5. মানুষের জ্ঞান বা সক্ষমতা(Capacity):বিশ্বগ্রামের উপাদানগুলোর মধ্যে ব্যবহারকারীর জ্ঞান বা সক্ষমতা অন্যতম।বিশ্বগ্রাম মূলত তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর তাই মানুষের সচেতনতা ও সক্ষমতার উপর এর সুফল নির্ভর করছে।

তাছাড়াও বিশ্বগ্রাম ধারণা সংশ্লিষ্ট কিছু প্রধান উপাদান রয়েছে।উপাদানগুলো হলো

  • যোগাযোগ
  • কর্মসংস্থান
  • শিক্ষা
  • চিকিৎসা
  • গবেষণা
  • অফিস
  • বাসস্থান
  • ব্যবসায় বাণিজ্য
  • সংবাদ
  • বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ
  • সাংস্কৃতিক বিনিময় ইত্যাদি

উপরের এই বিষয় গুলো পরবর্তী পোস্টগুলোতে ধারাবাহিকভাবে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

তথ্যসূত্রঃ

  • উইকিপিডিয়া
  • একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর সিলেবাস অনুযায়ী প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ
  • জাতীয় তথ্য বাতায়ন (মুক্তপাঠ)

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।