জীবে পরিবহন – (জীববিজ্ঞান, ৯ম-১০ম) | নোট ২

১।”অভিস্রবণ এক ধরনের ব্যাপন”- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: অভিস্রবণ ও ব্যাপন প্রত্রিয়া উভয়ক্ষেত্রেই উচ্চ ঘনত্বের অঞ্চল থেকে নিয় ঘনত্বের অঞ্চলের দিকে পদার্থের কণাগুলো প্রবাহিত হয়। তবে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় বৈষম্যভেদ্য পর্দার প্রয়োজন হয় এবং শুধু দ্রাবক প্রবাহিত হয়। তাই বলা যায়, অভিস্রবণ একটি বিশেষ ধরনের ব‍্যাপন।

২।হার্ট এ্যাটাক কেন হয়?

উত্তর: হার্ট অ্যাটাকের সাথে দেহের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। রক্তে গ্লকোজের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকলে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যেমন অধিক তেলযুক্ত খাবার (বিরিয়ানি, তেহারি ইত্যাদি), ফাস্টফুড (বার্গার, বিফ বা চিকেন প্যাটিস ইত্যাদি) খাওয়া, অলস জীবনযাপন এবং শারীরিক পরিশ্রম না করার ফলে এই রোগ দেখা যায়। এছাড়াও সবসময় হতাশা, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও বিমর্ষ থাকলে যেকোনো বয়সে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৩।মানব হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তের মিশ্রণ ঘটে না কেন?

উত্তর: প্রাণিদেহ সুস্থ রাখতে এই হৃৎপিণ্ডের ভূমিকা অপরিসীম। রক্ত সংবহনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ হৃৎপিণ্ড। এর সাহায্যেই সংবহনতন্ত্রের রক্ত প্রবাহ সচল থাকে। হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলো সম্পূর্ণ বিভক্ত থাকায় এখানে অক্সিজেনযুক্ত ও অক্সিজেনবিহীন রক্তের সংমিশ্রণ ঘটে না এবং পাম্প করা রক্ত একই দিকে চলে।

৪।নিষ্ক্রিয় শোষণ থেকে সক্রিয়শোষণ আলাদা কেন?

উত্তর: নিষ্ক্রিয় শোষণ থেকে সক্রিয় শোষণ আলাদা। কারণ নিষ্ক্রিয় শোষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ মূলরোমের মাধ্যমে ইমবাইবিশন ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় খনিজ লবণ শোষণ করে। এক্ষেত্রে কোনো বিপাকীয় শক্তির প্রয়োজন হয় না।

অন্যদিকে, সক্রিয় শোষণে খনিজ লবণ পরিবহনের জন্য কোষে উৎপন্ন বিপাকীয় শক্তির প্রয়োজন হয়।

৬।প্রস্বেদনকে প্রয়োজনীয় ক্ষতি বলা হয় কেন?

উত্তর: উদ্ভিদের জীবনে প্রস্বেদন একটি অনিবার্য প্রক্রিয়া। প্রস্বেদন উদ্ভিদের পানি শোষণে সাহায্য করে। উদ্ভিদ প্রস্বেদনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পত্রফলক কর্তৃক শোষিত তাপশক্তি হ্রাস করে পাতার কোষগুলোর তাপমাত্রা সহনশীল পর্যায়ে রাখে। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রক্রিয়াটি উদ্ভিদের বহু ধরনের উপকার করলেও কিছু অপকারী ভূমিকাও রয়েছে। যেমন- অতিরিক্ত প্রস্বেদনের জন্য উদ্ভিদের পানি ও খনিজ লবণের ঘাটতি হয়, এমনকি উদ্ভিদের মৃত্যুও হতে পারে। এজন্য প্রস্বেদনকে অতি প্রয়োজনীয় অমঙ্গল বলা হয়।

৭।কোন প্রকারের শ্বেত কণিকা আমাদের দেহে এন্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: রক্তে কয়েক ধরণের শ্বেতরক্তকণিকা পাওয়া যায়। যেমন, লিম্ফোসাইট,
মনোসাইট, নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল এবং বেসোফিল ইত্যাদি।
এদের মধ্যে লিম্ফোসাইট আমাদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে। কেননা লিম্ফোসাইট দানাহীন সাইটোপ্লাজম এবং বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত ছোট শ্বেত রক্তকনিকা যা অ্যান্টিবডি গঠন করে। এই অ্যান্টিবডি দেহে প্রবেশ করা রোগজীবাণু ধ্বংস করে। এভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

৮।দেহে রক্ত চলাচল কমে গেলে কী সমস্যা হতে পরো ব্যাখা কর।

উত্তর: হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনিগাত্রে চর্বি জমা হলে ধমনিতে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহে বিগ্ন ঘটে, ফলে হৃৎপিণ্ড পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং খাদ্যসার না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়। এ অবস্থাকে অ্যানজিনা বলা হয়। এছাড়া ধমনির গায়ে বেশি চর্বি জমা হলে রক্তনাবায় ধাধাগ্রস্ত হয় ফলে করোনারি হৃদরোধের আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়ে যায়।

৯।ফুলের সুগন্ধ কীভাবে চারদিকে ছড়ায়? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: ফুলের সুগন্ধ ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়।

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন দ্রব্যের অণু বেশি ঘনত্বের এলাকা থেকে কম ঘনত্বের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, তাকে ব্যাপন প্রক্রিয়া বলে। এটি একটি ভৌর প্রক্রিয়া। ফুলের মধো সুগন্ধ সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থের ঘনত্ব বেশি থাকে এবং বাইরের পরিবেশে এসব উপাদানের ঘনত্ব কম থাকে। তাই ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব সুগন্ধি রাসায়নিক উপাদান বেশি ঘনত্বের এলাকা থেকে কম ঘনত্বের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

১০।রক্তশূন্যতা কেন হয়?

উত্তর:লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন অক্সিহিমোগ্লোবিন হিসেবে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে। হিমোগ্লোবিন এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ। লোহিত রক্তকণিকায় এর উপস্থিতির কারণে রক্ত লাল দেখায়। রক্তে প্রয়োজনীয় পরিমাণ হিমোগ্লোবিন না থাকলে রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

১১।উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: রক্ত চলাচলের সময় রক্তনালিগাত্রে যে চাপ সৃষ্টি হয় তাকে রক্তচাপ বলে। আর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তচাপকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। বাবা বা মায়ের উচ্চে রক্তচাপ থাকলে তার সন্তানদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও যারা প্রায়বিক চাপে বেশি ভোগেন, অথবা ধূমপানের অজান আছে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। দেহের ওজন বেশি বেড়ে গেলে কিংবা লবণ এবং চর্বিযুক্ত খাদ্য বেশি খেলে, এমনকি পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিস বা কোলেস্টরলের পূর্ব ইতিহাস থাকলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়।

১২।উদ্ভিদদেহে পানির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

উত্তর:প্রোটোপ্লাজম সজীব রাখতে পানির বিকল্প নেই। একটি সংকুচিত প্রোটোপ্লাজম কোষকে বাঁচাতে চাইলে দেরি না করে পানি সরবরাহের ব্যবস্থ করতে হবে। প্রস্বেদন ও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালু রাখতে পরিমাণমতো পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার। এজন্যই শুল্ক মৌসুমে বড় বড় উদ্ভিদেও পানি সেচ দিতে হয়। পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্রাবক। বিপাকীয় অনেক বিক্রিয়ায় পানির গুরুত্ব অপরিসীম। উদ্ভিদের কোষ বৃদ্ধি ও চলনে পানির ভূমিকা রয়েছে।

১৯।রক্ত সঞ্চালনে কপাটিকার ভূমিকা কী?

উত্তর: অলিন্দ দুটির সংকোচন হলে নিলয় দুটির পেশি প্রসারিত হয়। তখন ডান অলিন্দ-নিলয়ের ছিদ্রপথের ট্রাইকাসপিডো ভালভ খুলে যায় এবং ডান অলিন্দ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত রক্ত ডান নিলয়ে প্রবেশ করে। ঠিক এই সময়ে বাম অলিন্দ এবং বাম নিলয়ের বাইকাসপিড ভালভ খুলে যায়। তখন বাম অলিন্দ থেকে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে। এর পরপরই ছিদ্রগুলো কপাটিকা দিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে নিলয় থেকে রক্ত আর অলিন্দে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে রক্তে একমুখী প্রবাহ নিশ্চিত হয় এ হৃৎপিণ্ড সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।

২০।বাতজ্বর হলে হৃৎপিণ্ডে কী সমস্যা দেখা দেয়া ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : স্ট্রোপটোকক্কাস অণুজীবের সংক্রমনে সৃষ্ট শ্বাসনালির প্রদাহ, ফুসফুরিযুক্ত সংক্রামক জ্বর, টনসিলের প্রদাহ বা মধ্যকর্ণের সংক্রামক রোগ বাতজ্বরের উল্লেখ্যযোগ্য লক্ষণ। এ রোগে বিশেষ করে হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হয়। হৃদপেশী এবং হৃৎপিন্ডের কপাটিকা বা ভালভ অনেক সময় ক্ষতি গ্রস্থ হয়। ফলে হৃৎপিন্ড যথাযথভাবে রক্ত পাম্প করতে সক্ষম হয় না এবং দেহে রক্ত প্রবাহের পরিমাণ কমে যায়।

২১।হার্ট অ্যাটাক বলতে কী বুঝায়?

উত্তর :যখন কারও হৃদযন্ত্রের কোনো অংশ রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় কিংবা বাঁধাগ্রস্থ হয়, এতে হৃদপিন্ডের কোষ কিংবা হৃদপেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন অথবা করোনারী থ্রোম্বসিস নামে হার্ট অ্যাটাক ঘটে।

২২।শ্বেত রক্ত কণিকাকে দেহের প্রহরী কোষ বলা হয় কেন?

উত্তর:শরীরের ভিতরের রোগ-জীবাণু প্রবেশ করলে, শ্বেত রক্ত কণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঐ জীবাণুকে ধ্বংস করে। শ্বেত রক্ত কনিকা কিছু কিছু রোগ-জীবানুকে অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমেও ধ্বংস করে দেহকে রোগ-জীবাণু মুক্ত রাখে। এভাবে শ্বেত রক্ত কণিকা দেহের প্রহরীর মতো কাজ করে।

২৩।রক্তের উপাদানগুলো কি কি?

উত্তর :রক্ত এক ধরনের তরল যোজক কলা। রক্ত রক্তরস ও কয়েক প্রকার রক্তকণিকা নিয়ে গঠিত।

মানবদেহে তিন ধরনের রক্তকণিকা আছে। যথা লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অনুচক্রিকা।

২৪।রক্তনালী বলতে কী বোঝ?

উত্তর: যেসব নালির ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয় তাদেরকে রক্তনালি বলা হয়। এসব নালিপথে হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত বাহিত হয় এবং দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে পুনরায় রক্ত হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে। ধমনি, শিরা এ-কৈশিক জালিকা মানবদেহে এই তিন ধরনের রক্তনালি রয়েছে।

২৫।ধমনীর প্রাচীর কয়টি ও কি কি?

উত্তর: ধমনির প্রাচীর তিন স্তরবিশিষ্ট।

১. টিউনিকা এক্সটার্না (Tunica externa) যা তন্তুমর যোজক কলা দিয়ে তৈরি

২. বৃক্তকার অনৈচ্ছিক পেশি দিয়ে তৈরি মাঝের স্তর টিউনিকা মিডিয়া(Tunicamedia)

৩. টিউনিকা ইন্টারনা (Tunica interna) নামক ভিতরের স্তরটি সাল আবরণী কলা দিয়ে তৈরি।

২৬।পরিবহন বলতে কি বোঝায়?

উত্তর: পরিবহন অর্থ একস্থান থেকে অন্য স্থানে কোনো পদার্থের স্থানান্তর। পানি ও খনিজ লবণের চলাচলকে উদ্ভিদে পরিবহন বলা হয়। মূলরোম দিয়ে পানি ও খনিজ লবণ শোষিত হয়ে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় কর্টেক্সের মধ্য দিয়ে জাইলেম ভেসেলে পৌঁছায় এবং প্রস্বেদন স্রোতের সাথে ধীরে ধীরে পাতায় দিয়ে পৌঁছে।

২৭।হাইড্রোফিলিক পদার্থ কী? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: যেসব পদার্থ পানি শোষণ করে স্ফীত হয় সেসব পদার্থকে হাইড্রোফিলিক পদার্থ বলে। আঠা, সেলুলোজ, স্টার্চ, প্রোট্রিন, জেলাটিন প্রভৃতি হাইড্রোফিলিক পদার্থ। কলয়েড জাতীয় পদার্থই হাইড্রোফিলিক পদার্থ। পানির অভাব হলে এসব পদার্থ সংকুচিত হয়। আবার পানি পেলে তা শোষণ করে স্ফীত হয়।

২৮।কোলেস্টেরল বলতে কী বুঝায়?

উত্তর: কোলেস্টেরোল হাইড্রোকার্বন কোলেস্টেইন থেকে উৎপন্ন একটি যৌগ। উচ্চ শ্রেণির প্রাণীজ কোষের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কোলেস্টেরল।কোলেস্টোরেল লিপোপ্লোটিন নামক যৌগ সৃষ্টির মাধ্যমে রক্তে প্রবাহিত হয়।রক্তে তিন ধরনের লিপোপ্রোটিন দেখা যায়। যথাঃ১)LDL.২)HDL. ৩)ট্রাই-গ্লিসারাইড

২৯।কিউটিকুলার প্রস্বেদন বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: উদ্ভিদের বহিঃত্বকে বিশেষ করে পাতার উপরে এবং নিচে কিউটিনের আবরণ থাকে। এ আবরণকে কিউটিকল বলে। কিউটিকল ভেদ করে কিছু পানি বাষ্পাকারে বাইরে বের হয়। এ প্রক্রিয়াকে কিউটিকুলার প্রস্বেদন বলে।

৩০।রক্তচাপ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: রক্ত প্রবাহরে সময় ধমনিগারে যে চাপ সৃষ্টি হয় তাকে রক্তচাপ বলে। হৃদপিন্ডেরে সংকোচন বা সিস্টোল অবস্থায় ধমনিগাত্রে রক্তচাপের মাত্রা সর্বাধিক থাকে একে সিস্টোলিক চাপ বলে। হৃদপিণ্ডের প্রসারণ বা ডায়াস্টোল অবস্থায় রক্তচাপ কম থাকে। একে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।