১। মানবদেহে পেশির কাজ ব্যাখ্যা কর।
: মানবদেহে পেশির কাজ নিম্নরূপ:
১। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন, চলাফেরায় সহায়তা, অঙ্গ বিন্যাস ও ভারসাম্য রক্ষা করে।
২। কঙ্কালতন্ত্রের সাথে যৌথভাবে দেহের নির্দিষ্ট আকার গঠন করে।
৩। পেশিতে গ্লাইকোজেন সঞ্চয় করে শক্তির উৎস ও ভবিষ্যতের জন্য শক্তি সংরক্ষণ করে।
৪. বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ায় হৃদপেশি হৃদপিণ্ডের স্পন্দন ও রক্ত সঞ্চালনের দায়িত্ব পালন করে।
২। অস্টিওপোরোসিস হলে তুমি কিভাবে বুঝবে?
: অস্টিওপোরোসিস হলে বুঝার উপায় হলো:দেহে খনিজ লবণ বিশেষ এতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে এ রোগটি হয়। মহিলাদের মেনোপস হওয়ার পর অস্থির ঘনত্ব ও পুরুত্ব কমতে থাকে।
- অস্থি ভঙ্গুর হয়ে যায়, ঘনত্ব কমতে থাকে।
- পেশির শক্তি কমতে থাকে।
- পিঠের পিছন দিকে ব্যখ্যা অনুভব হয়।
•অস্থিতে ব্যাথা অনুভব হয়।
৩।হাতের কনুইকে দরজার কব্জার সাথে তুলনা করা হয়েছে কেন? ব্যাখ্যা কর।
: কব্জা যেমন দরজার পাল্লাকে কাঠামোর সাথে আটকে রাখে, সেরূপ কব্জার মতো সন্ধিকে কব্জা সন্ধি। বলে। যেমন হাতের কনুই, জানু এবং আঙ্গুলগুলিতে এ ধরনের সন্ধি দেখা যায়। এসব সন্ধি কেবল এক দিকে নাড়ানো যায়। এগুলো সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধির উদাহরণ।
৪।অস্থি সঞ্চালনে সাইনোভিয়াল রস কী ভূমিকা রাখে? ব্যাখ্যা কর।
: তরুণাস্থিতে আমৃত অস্থিপ্রান্ত, সাইনোভিয়াল রস এবং অস্থিসন্ধিতে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখার জন্য অস্থিবন্ধনী বা লিগামেন্টন্ট বেষ্টিত একটি মজবুত আবরণী বা কপসুল। অস্থিসন্ধিতে সাইনোভিয়াল রস এবং তরুণাস্থি থাকতে অস্থিতে অস্থিতে ঘর্ষণ এবং তজ্জনিত ক্ষয় হ্রাস পায় ও অস্থিসন্ধি নড়াচড়া ভয়ে কম শক্তি বায় হয়।
৫।তরুণাস্থি বলতে কী বোঝায়?
: কঙ্কালতন্ত্রের অপেক্ষাকৃত নরম ও স্থিতিস্থাপক অস্থিই হলো তরুণাস্থি। এটি যোজক কলার ভিন্নরূপ। এর কোষগুলো একক বা জোড়ায় জোড়ায় খুব ঘনভাবে স্থিতিস্থাপক মাতৃকাতে অবস্থান করে। তরুণাস্থি বিভিন্ন অস্থির সংযোগস্থলে, কিংবা অস্থির কিছু অংশে উপস্থিত থাকে।
৬।বয়স্ক মানুষের ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন কেন?
:অস্থির গঠন ও দৃঢ়তার জন্য ক্যালসিয়াম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ক্যালসিয়ামের অভাবে অস্থি ভঙ্গুর হয়ে বয়স্ক মানুষের অস্টিওপোরেসিস রোগ হয়। এতে অস্থিতে ব্যাথাসহ পেশির শক্তি কমতে থাকে। এজন্যই অস্থির গঠন ও দৃঢ়তার জন্য বয়স্ক মানুষের ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন।
৭। পেশির ৪টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ উল্লেখ কর।
: পেশির ৪টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ:
১। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন, চলাফেরায় সহায়তা, অঙ্গ বিন্যাস ও ভারসাম্য রক্ষা কর।
২। কঙ্কালতন্ত্রের সাথে যৌথভাবে দেহের নির্দিষ্ট আকার গঠন করা।
৩। পেশিতে গ্লাইকোজেন সঞ্চয় করে শক্তির উৎস ও ভবিষ্যতের জন্য শক্তি সংরক্ষণ করে।
৪। বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ায় হৃদপেশি হৃদপিণ্ডের স্পন্দন ও রক্ত সঞ্চালনের দায়িত্ব পালন করেন।
৮। বহিঃকঙ্কাল বলতে কি বুঝায়?
: বহিঃকঙ্কাল: শক্ত অস্থির কাঠামো ছাড়া দেহের স্থিতিশীল আকার সম্ভব নয়। মানবদেহের সব অস্থি এবং এদের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য অংশ একত্রে কঙ্কাল গঠন করে।
মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্রকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: (১) বহিঃকঙ্কাল ও (২) অন্তঃকঙ্কাল।
কঙ্কালের যে অংশগুলো বাইরে অবস্থান করে সেগুলোকে বহিঃকঙ্কাল বলে। যেমন- নখ, চুল, লোম এর অন্তর্ভুক্ত।
৯। হাতের কনুইকে কব্জা সন্ধি বলা হয় কেন?
: কব্জা সন্ধি বলার কারণ: কব্জা যেমন দরজার পাল্লাকে কাঠামোর সাথে আটকে রাখে, সেরূপ কব্জার মতো সন্ধিকেও কব্জা সন্ধি বলে। যেমন হাতের কনুই, জানু এবং আঙ্গুলগুলিতে এ ধরনের সন্ধি দেখা যায়। এসব সন্ধি কেবলমাত্র একদিকে নাড়ানো যায়।
১০। অস্টিওপোরোসিস বলতে কী বুঝায়?
: অস্টিওপোরোসিস: অস্টিওপোরোসিস ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত অস্থির একটি রোগ। বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের সাধারণত এ রোগটি হয়। যেসব বয়স্ক পুরুষ বহুদিন যাবৎ স্টেরয়েডযুক্ত ঔষধ সেবন করেন, তাদের ও নারীদের মেনোপজ হওয়ার পর এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাছাড়া অনেকদিন ধরে আর্থ্রাইটিসে ভুগলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।
১১। সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি বলতে কী বোঝায়?
: যে অস্থিসন্ধি ক্যাপসুল বা অস্থিসন্ধি আবরণী এবং সাইনোভিয়াল রস নামক একধরনের তৈলাক্ত পদার্থ নিয়ে গঠিত হয় তাই সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি। এ অস্থিসন্ধিতে সাইনোভিয়াল রস ও তরুণাস্থি থাকায় অস্থিতে অস্থিতে ঘর্ষণ ও ক্ষয় প্রতিবোধ করে এবং অস্থিসন্ধি নড়াচড়া করতে কম শক্তি ব্যয় হয়।
১২। অস্থি বলতে কী বোঝায়?
:অস্থি যোজক কলার রুপান্তিত রূপ। এটি দেহের সর্বাপেক্ষা দৃঢ় কলা। অস্থির মাতৃকা এক প্রকার জৈব পদার্থ দ্বারা গঠিত। অস্থি মূলত ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের বিভিন্ন যৌগ দিয়ে তৈরি। এছাড়া অস্থিতে প্রায় ৪০ ৫০ ভাগ পানি থাকে।
১৩। লিগামেন্ট বলতে কি বোঝ?
: লিগামেন্ট: পাতলা কাপড়ের মতো কোমল অথচ দৃঢ়, স্থিতিস্থাপক যে বন্ধনী দিয়ে অস্থিগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে তাকে অস্থিবন্ধনী র লিগামেন্ট বলে। লিগামেন্ট শ্বেততন্ত্র এবং পীততন্ত্র এই দুই ধরনের ইলাস্টিক তন্তু দিয়ে গঠিত। এতে পীতবর্ণের স্থিতিস্থাপক তত্ত্বর সংখ্যা বেশি থাকে।
১৪।তরুণাস্থির গঠন সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
: তরুণাস্থির গঠন: তরুণাস্থি অস্থির মতো শক্ত নয়। এগুলে অপেক্ষাকৃত নরম এবং স্থিতিস্থাপক। এটি যোজক কলার ভিন্নরূপ। এর কোষগুলো একক বা জোড়ায় জোড়ায় খুব ঘনভাবে স্থিতিস্থাপক মাতৃকাতে বিস্তৃত থাকে। তরুণাস্থি কোষগুলো থেকে কন্ড্রিন নামক এক ধরনের শক্ত ঈষদচ্ছ রাসায়নিক বস্তু বের হয়। মাতৃকা কন্ড্রিন দিয়ে গঠিত, এর বর্ণ হালকা নীল। জীবিত অবস্থায় তরুণাস্থি কোষের প্রোটোপ্লাজম খুব স্বচ্ছ এবং নিউক্লিয়াসটি গোলাকার থাকে। কন্ড্রিনের মাঝে গহরর দেখা যায় এগুলোকে ক্যাপসুল বা ল্যাকিউনি বলে। এর ভিতর কন্ড্রিওরাস্ট বা কন্ট্রিওসাইট থাকে।
১৫।অস্টিওপোরোসিস রোগটি কাদের এবং কেন হয়?-সংক্ষেপে লিখ।
: বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের সাধারণত এ রোগটি হয়। যেসব বয়স্ক পুরুহ বহুদিন যাবৎ স্টেরয়েডযুক্ত ঔষধ সেবন করেন তাদের ও নারীদের মেনোপজ হওয়ার পর এ রোগ হবার সম্ভাবনা বেশি। যারা অলস জীবন যাপন করেন, কায়িক পরিশ্রম কম করেন তাদের এ রোগ হওয়ার আশ্বা থাকে। তাছাড়া অনেকদিন ধরে আর্থ্রাইটিসে ভুগলে এ রোগ হওয়ার আশমা অনেক বেশি থাকে।
১৬।কনুই ভাঁজ করা এবং খোলার ত্রিয়াকৌশল সংক্ষেপে আলেচনা কর।
: কনুই বাঁকা করতে হলে ইচ্ছাধীন স্নায়ুর তাড়নায় বাইসেপস পেশি সংকুচিত হয় এবং ট্রাইসেপস পেশি শিথিল হয়ে প্রসারিত হয়। ফলে রেডিয়াস ও আলনাকে হিউমেরাসের কাছে নিয়ে আসে। কনুই সেজ করতে হলে ঠিক তার বিপরীত কার্যক্রমটি ঘটে, অর্থাৎ ইচ্ছাধীন স্নায়ুর প্রস্তুর তাড়নায় ট্রাইসেপস পেশি সংকুচিত হয় এবং রেডিয়াস এবং অলনকে টেনে সোজা করে হিউমেরাসের সাথে প্রায় এক সরলরেখায় নিয়ে আসে। এ সময় বাইসেপস পেশি শিথিল হয়ে প্রসারিত হয়। এভাবে বাইসেপস এক ট্রাইসেপস পেশির সংকোচন এবং শ্লথ হওয়ার মাধ্যমে আমরা কনুই ভকরতে আর ফুলতে পারি।
১৭।পেরিকন্ড্রিয়াম বলতে কি বোঝ?
: পেরিকন্ডিয়াম: সব তরুণাস্থি একটি তত্ত্বময় যোজক কলা নির্মিত আবরণী দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে, একে পেরিকন্ড্রিয়াম বলে। এই আবরণী দেখতে চকচকে সাদা, তাই আমরা সাধারণত তরুণাস্তিকে সাদা নীলান এবং চকচকে দেখতে পাই।
১৮।বল ও কোটরসন্ধি এবং কব্জা সন্ধির মধ্যে পার্থক্য কী?
: নিচে কল ও কোটরসন্ধি এবং কব্জা সন্ধির মধ্যে পার্থক্য দেওয়া হলো-
বল ও কোটরসন্ধি:
(১) এ সন্ধিতে সন্ধিস্থলে একটি অস্থির মাথার গোল অংশ অন্য অস্থির কোটরে স্থাপিত থাকে।
(ii) এসব সন্ধি সকল দিকে নাড়ানো যায়।
কব্জা সন্ধি:
(i) কর্তা যেমন দরজার পাল্লাকে কাঠামোর সাথে আটকে রাখে, সেরূপ কব্জার মতো সন্ধিকে কব্জা সন্ধি বলে। যেমন- হাতের কনুই, জানু ইত্যাদি।
(ii) এসব সন্ধি কেবল একদিকে নাড়ানো যায়।
১৯।পেরিকন্ড্রিয়াম ও পেরিটেডিয়ামের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ কর।
: পেরিকন্ড্রিয়াম ও পেরিটেডিয়ামের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেওয়া হলো:
১। তরুণাস্থি যে তন্তময় যোজক কলা নির্মিত অবরনী কলা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে, তাকে পেরিকন্ড্রিয়াম বলে।
১। টেনডনে যে শ্বেত অন্তময় যোজক টিস্য থাকে তা দলবদ্ধ ভাবে একত্রে আটিগুচ্ছ তৈরি করে যা অ্যরিওলার টিস্যু দ্বারা বেষ্টিত হয়ে অধিকতর বড় আঁটিতে শ্রেণিবদ্ধ হয় তাকে পেরিটোরিয়াম বলে।
২। এটি তরুণাস্থির জন্য।(পেরিকন্ড্রিয়াম)
২। এটি অস্থির জন্য।(পেরিটেডিয়াম)
২০।অস্থিসন্ধি কেন প্রয়োজন?
: অস্থিসন্ধির প্রয়োজনীয়তা: দুই বা ততোধিক অস্থির সংযোগস্থলকে অস্থিসন্ধি বলে। দুই বা ততোধিক অস্থিকে একসাথে সংযুক্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ কঙ্কালতন্ত্র গঠনে অস্থিসন্ধি সাহায্য করে। এছাড়া অস্থিসন্ধি মানবদেহের হাত-পা, আঙ্গুল, মেরুদণ্ড, মাথা ও ঘাড়কে নড়া চড়া ও বাঁকাতে সাহায্য করে।
২১।গেঁটেবাত হলে শরীরে কী সমস্যা হয়?
: গেঁটেবাত এর সমস্যা:
১। অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়,
২। অস্থিসন্ধি গুলো শক্ত হওয়ায় নাড়াতে কষ্ট হয়
৩। গিট ফুলে যায়।
২২।অস্টিওব্লাস্টস্ট ও কন্ট্রিওব্লাস্ট এর মধ্যে পার্থক্য কী?
: অস্টিওরাস্ট ও কন্ট্রিওব্লাস্ট এর মধ্যে পার্থক্য:
অস্টিওরাস্ট
১. এটি অস্থিকোষ
২. এটি শাখা-প্রশাখা যুক্ত।
৩. এটি মাকড়সার জালের মতো।
কন্ট্রিওব্লাস্ট
১. এটি তরুণাস্থিকোষ।
২. এটি শাখা-প্রশাখা যুক্ত নয়।
৩. এটি গোলাকার।
২৩।ঈষৎ সচল অস্থিসন্ধি বলতে কী বুঝায়?
: ঈষৎ সচল অস্থিসন্ধি: ঈষৎ সচল অস্থিসন্ধি সামান্য নড়াচড়া করতে পারে। এজন্য আমরা দেহকে সামনে, পিয়নে ও পাশে বাঁকাতে