১। দেহে কিভাবে পানির ভারসাম্য রক্ষিত হয়? ব্যাখ্যা কর।
: প্রতিদিন দেহ থেকে মলমূত্র, ঘাম ইত্যাদি মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ নয়। নির্গত হয়। তবে মুত্রের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পানি দেহ থেকে বেবিয়ে দেহের পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ বৃক্ক প্রধান ভূমিকা পালন করে। বৃক্ক নেফ্রুনের মাধ্যমে পুনঃশোষণ প্রক্রিয়ায় দেহে পানির সমতা বজায় রাখে। গ্লোমেরুসকে রেচন বর্জ্য, পানি এবং অন্যান্য তরল পদার্থ পরিস্রুত হয়। তাছাড়া বয়স,আবহাওয়া, পরিশ্রম, খাওয়ার অভ্যাস ইত্যাদি বিষয়গুলো পানির চাহিদাও প্রভাবিত করে। তাই একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ২ লিটার পানি পান কর প্রয়োজন। এভাবে দেহে পানির ভারসাম্য রক্ষিত হয়।
২। মহিলা এবং পুরুষদের মধ্যে কার বৃক্কে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ব্যাখ্যা কর।
: বৃক্কে পাথর সবারই হতে পারে, তবে দেখা গেছে মহিলা ও পুরুষান মধ্যে পুরুষদের বৃক্কে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অতিরিক্ত প্রাণিজ আমিষ এবং করা, অতিরিক্ত শারীরিক ওজন, কিডনি সংক্রমন, কম পানি পান করা- বৃক্কে পাথর হওয়ার বিশেষ কিছু কারণ। এ কারণগুলো পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি দেখ যায়। ফলে পুরুষদের বৃক্কে পাথর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৩। ডায়ালাইসিস কেন করা হয়?
: বৃক্ক সম্পূর্ণ অকেজো বা বিকল হবার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ত পরিশোধিত করার নাম ডায়ালাইসিস। সাধারণত ‘ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত করা হয়। এ মেশিনটির ডায়ালাইসিস টিউবটির এক প্রান্ত রোগীর হাতের কব্জির ধমনির সাথে ও অন্য প্রান্ত ঐ হাতের কক্তির শিরার সাথে সংযোজন করা হয়।
৪। ডায়ালাইসিস বলতে কী বোঝায়?
: বৃক্ত সম্পূর্ণ অকোজো বা বিকল হবার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ত পরিশোধিত করার নাম ডায়ালাইসিস। রক্তের বর্জ্য দ্রবাদি অপসারণে নির্দিষ্ট সময় পর পর রোগীকে ডায়ালাইসিস করা হয়।
৫। তোমার দেহে বৃক্ক কীভাবে কাজ করে? ব্যাখ্যা কর।
: গ্লোমেরুলাস ছাঁকনির মতো কাজ করে রক্ত থেকে পরিস্রত তরল উৎপন্ন করে। এই তরলকে বলে আল্ট্রাফিলট্রেট। সেই আস্ট্রাফিলট্রেট রেনাল টিউব্যুলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় আরও কয়েক দফা শোষণ এবং নিঃসরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। সর্বশেষে যে তরলটি পাওয়া যায়, সেটিই মূত্র, যা সংগ্রাহী নালিধর মধ্য দিয়ে ইউরেটার হয়ে মুত্রথলিতে জমা হতে থাকে।
৬। বৃক্ক বিকল হওয়ায় আকস্মিক ও ধীর কারণগুলো কি?
: বৃক্ত বিকল্প হওয়ার আকস্মিক কারণ-
১. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
২.মারাত্মক ডায়রিয়া
৩.অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
ধীরে ধীরে বৃক্ক বিকল হওয়ার কারণ-
১. নেফ্রাইটিস
২. ডায়াবেটিস।
৩. উচ্চ রক্তচাপ
৪. কিডনিতে পাথর।
৭। ‘ব্রেন ডেড’ বলতে কি বুঝায়?
:ব্রেন ডেড বলতে মৃত মানুষকে বুঝায়, যার আর কখনোই জ্ঞান ফিরবে না কিন্তু তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কৃত্রিমভাবে জীবিত রাখা হয়েছে। ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। যেমন, কিডান, যকৃত, কর্ণিয়া ইত্যাদি।
৮। কিডনি রোগের লক্ষণগুলো লিখ।
উত্তর: কিডনি রোগের লক্ষণ:-
১. শরীর ফুলে যাওয়া
২. প্রস্রাবে প্রোটিন বা আমিষ যাওয়া।
৩. রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব হওয়া
৪. প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া করা
৫. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
৬. প্রস্রাব বন্ধ হওয়া।
৯। ইউরিনিফেরাস নালিকার প্রধান অংশগুলোর কাজ কি?
: ইউরিনিফেরাস নালিকা দুটি প্রধান আংশে বিভক্ত। নিম্নে এদের কাজ উল্লেখ করা হল-
(i) নেফ্রন -মূত্র তৈরি করে
(ii) সংগ্রাহী নালিকা-রেনাল পেলভিলে মূত্র বহন করে।
১০। রেনাল টিউব্যুল কি? এর অংশগুলো লিখ।
:বোম্যান্স ক্যাপসুলের অম্কীয়দেশ থেকে সংগ্রাহী নালি পর্যন্ত বিস্তৃত চওড়া নালিকাটিকে রেনাল টিউবাল বলে। দুই বৃক্কে মোট ২০ লক্ষ রেনাল টিউব্যালু থাকে। প্রতিটি রেনাল টিউব্যালু ৩টি অংশে বিভক্ত, যথা। গোড়াদেশীয় প্যাঁচানো নালিকা, হেনলি-র লুপ, প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকা।
১১। বৃক্কের হাইলাসে কি প্রবেশ করে ও এ থেকে কি বের হয়?
: বৃক্কের হাইলাস দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে- রেনাল, ধমনী, স্নায়ুতন্ত এ বৃক্কের হাইলাস দিয়ে বাইরে বের হয়- রেনাল শিরা, লসিকানালী, এবং ইউরেটার।
১২।বৃক্কের কাজগুলো লিখ।
: বৃক্কের কাজ-
১. মানবদেহে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
২. মানবদেহে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
৩. মানবদেহে পানি এবং অম্ল ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা।
৪. লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তাঃ।
৫. ছকন যন্ত্র হিসেবে কাজ করে রক্ত থেকে বহ্য পদার্থ পৃথক করা।
১৩।বৃক্কের হাইলাসে কি প্রবেশ করে ও এ থেকে কি বের হয়?
বৃক্কের হাইলাস দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে- রেনাল, ধমনী, স্নায়ুতন্ত এ বৃক্কের হাইলাস দিয়ে বাইরে বের হয়- রেনাল শিরা, লসিকানালী, এবং ইউরেটার।
১৪।হেনলীর লোপ বলতে কী বুঝায়?
: এটি হচ্ছে রেনাল টিউব্যুালের দ্বিতীয় অংশ যা নিম্নগামী বাহু এবং উর্ধগামী অংশ নিয়ে গঠিত। এটি দেখতে ‘U আকৃতির।
১৫। কিভাবে বৃক্কের পাথর অপসারণ করা যায়?
: বৃত্তের পাথর অপসারণের উপায়গুলো হল-
i)অধিক পানি গ্রহণ।
ii) ঔষধ সেবন।
iii) আধুনিক পদ্ধতিতে ইউটেরোস্কোপিক, আল্ট্রাসনিক লিথোট্রিপসি করা।
iv)বৃক্কে অস্ত্রোপচার করা।
১৬।রেচন পদার্থ বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা কর।
:রেচন পদার্থ বলতে মূলত নাইট্রোজেন গঠিত বর্জ্য পদার্থকে বুঝায়।মানব দেহের রেচন পদার্থ মুত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে আসে। মূত্রের এই ৯০ ভাগ উপাদান হচ্ছে পানি। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে আছে ইউরিয়া,ইউরিক এসিড ও বিভিন্ন ধরনের লবণ। ইউরোক্রোম নামে এক ধরনের রস্তক পদর্থের উপস্থিতিতে মূত্রের রং হালকা হলুদ হয়। ইউরোক্রোম নামে এক পদার্থের উপস্থিতিতে মূত্রের রং হালকা হলুদ হয়। আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহনের মূত্রে অম্লতা বৃদ্ধি ও ফলমূল এবং তরিতরকারি গ্রহণে সাধারণত ক্ষারীয় মূত্র হয়।
১৭।মালপিজিয়ান অঙ্গ বলতে কি বোঝায়?
: মালপিজিয়ান অঙ্গ বা রেনাল করপাসল হল নেফ্রনের একটি অংশ। গ্লোমেরুলাস এবং বোম্যান্স ক্যাপসুল এ দুটি অংশ নিয়ে এটি গঠিত হয়। গ্লোমেরুলাস হল একগুচ্ছ কৈশিক জালিকা, যাকে বেষ্টন করে থাকে বোম্যান্স ক্যাপসুল । এখানে রক্ত থেকে পরিশ্রুত তরুণ উৎপন্ন হয়।
১৮। টিস্যুম্যাচ বলতে কী বুঝা?
: দুইজন মানুষের মধ্যে HLA নামক বিশেষ এন্টিজেনের মিল থাকাকে টিস্যুম্যাচ বলে। দুইজন মানুষের মধ্যে HLA (Human Leukocyte) মধ্যে মিল থাকলে একজনের দেহে অন্যজনের কিডনি সংযোজন কিডনি সংযোজন সফল হয় না।
১৯। ধীরে ধীরে কিডনি বিকল হবার কারণগুলো কী কী?
ধীরে ধীরে কিডনি বিকল হবার কারণগুলো হলো-
১)ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
২)মারাত্মক ডায়রিয়া ও
৩)অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।
২০। কোন বর্জ্য পদার্থ কোন অঙ্গ দ্বারা নিম্নম্নান্ত হয় তা লিখ।
◑বর্জ্য পদার্থ->
অঙ্গ
C02,জলীয়বাষ্প
নইট্রোজেনজাত পদার্থ
পিত্তরঞ্জক
◑অঙ্গ>
ত্বক
ফুসফুস
বৃক্ক
যকৃত
২১। রেচনতন্ত্রের কাজগুলি লিখ।
: রেচনতন্ত্রের কাজ-
১. দেহের বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশন করা।
২. শরীরের অতিরিক্ত পানি, লবণ, CO₂, জৈব পদার্থ বের করা।
৩.দেহের শারীরবৃত্তীয় ভারসাম্য রক্ষা করা।
৪.দেহের অভ্যন্তরীণ পানি সাম্য রক্ষা করা।
৫. দেহের তাপমাত্রা ভারসাম্য রাখা।
২২। ডায়ালাইসিস মেশিনে একটি বিশেষ ধরনের তরল ব্যবহার করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
:ডায়ালাইসিস মেশিনে একটি বিশেষ ধরনের হয়। একে ডায়ালাইসিস ফ্লুইডে বলা হয়। ডায়ালাইসিস ফ্লুইডের রক্তের প্লাজমার অনুরূপ হয়। এর ফলে ডায়ালাইসিস টিউবের মাধ্যমে ধমনি দেকে অগত রক্ত হতে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ শিরার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে এবং পরিশোধিত রক্ত পদার্থ থেকে যুক্ত হয়।
২৩। মূত্র অশ্লীয় ব্য ক্ষারীয় হয় কেন?
:মুত্রের প্রায় 90 ভাগ উপাদান হচ্ছে পানি। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে আছে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ও বিভিন্ন ধরনের লবণ। ইউরোক্রোম নামে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতিতে মূত্রের রং হালকা হলুদ হয়। আমিষ-জাতীয় খাদ্য খেলে মুত্রের অম্লতা বৃদ্ধি পায় আবার ফলমূল এবং তরিতরকারি খেলে সাধারণত ক্ষারীয় মূত্র তৈরি হয়।
২৪। বৃককে মানবদেহের ছাঁকনি বলা হয় কেন?
:মানুষের শরীরে বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয়। এসব বর্জ্য পদার্থ রক্তের সাথে বৃক্কের গ্লোমেরুলসে আসে। সেখান থেকে বর্জ্য পদার্থগুলো বৃক্কের রেনাল টিউব্যুল চলে আসে এবং মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে বেরিয়ে যায় কিন্তু রক্তের প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন- রক্তকনিকা, প্লাজমা প্রোটিন রক্তনালীতে থেকে যায়। রক্তকে ছেকে বর্জ্যপদার্থ বের করে আনে বলে বৃক্ককে মানবদেহের ছাঁকনি বলা হয়।
২৫। মূত্র কীভাবে তৈরি হয়?
বা, দেহে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে মূত্র তৈরিকারী অঙ্গের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
: আমাদের দেহে মূত্র তৈরিকারী অঙ্গটি হলো বৃক্ক। বৃক্ক মূত্র তৈরি করে দেহে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। মানবদেহের যাবতীয় শারীরবৃত্তিক কাজ সম্পাদনের জন্য দেহে পরিমিত পানি থাকা অপরিহার্য। আবার দেহে পানির পরিমাণ বেড়ে গেলে নানারকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। মূলত মূত্রের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। বৃক্ক এর কার্যকরী একক নেফ্রনের মাধ্যমে পুণ্যশ্যেষণ প্রক্রিয়ায় দেহে পানির সমতা বজায় রাখে।