২০২৩ সাল থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনীতে নতুন কারিকুলাম চালু করা হলেও এবার ২০২৪ সাল থেকে ৮ম ও ৯ম শ্রেনীতে চালু করা হয়েছে নতুন কারিকুলাম। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেননা নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে প্রচলিত সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি, নানা পরিবর্তন আনা হয়েছে পাঠ্যসূচি, শিখন ও মূল্যায়ন কৌশলে। চলুন জেনে নেওয়া যাক নতুন কারিকুলাম বা শিক্ষা পদ্ধতি কি? এবং কি কি পরির্বতন থাকছে পাঠ্যসূচি, শিখন ও মূল্য়ায়ন কৌশলে?
শিক্ষাক্রম বা কারিকুলাম কী?
শিক্ষাক্রম বা শিক্ষা কারিকুলাম বলতে একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক নীতিমালাকে বুঝায়। যা ঔ দেশের জাতিগত, ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক এরূপ নানা বিষয় বিবেচনায় রেখে দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। তবে প্রয়োজনে এ সকল নিয়মনীতিতে পরির্বতন, পরির্মাজন বা সংশোধনের সুযোগ সংরক্ষিত থাকে। কোন একটি দেশের শিক্ষা কারিকুলাম এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন তা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা র্অজনের মাধ্যমে ঔ দেশের জনগণ যোগ্য ও অনন্য হয়ে উঠে।
নতুন কারিকুলাম সর্ম্পকে তাত্ত্বিক ধারণা
নতুন শিক্ষাক্রম বা কারিকুলাম প্রণীত হয়েছে মূলত চর্তুথ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান সমৃদ্ধ যোগ্য নাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে। সাথে সাথে এই কারিকুলামের মাধ্যমে অন্যান্য যেসকল যোগ্যতা র্অজনের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে তা হলোঃ মুক্তিযোদ্ধের চেতনা, দেশপ্রেম, উৎপাদনশীলতা, অভিযোজ্যতা ও মূল্যবোধ। এ কারিকুলামের মূলকথা হলো – অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন ও যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়ন। অর্থাৎ বিদ্যালয়ের শিখন শেখানো কার্যক্রম হবে অভিজ্ঞতাভিত্তিক। আর শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন হবে যোগ্যতাভিত্তিক।
অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন কী?
অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন বলতে, শিক্ষার্থীর শেখার বিষয়গুলোর সাথে বাস্তব অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটানোর মাধ্যমে শিখন-শেখানোর কৌশলকে বুঝায়। এর মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর কাছে যেন শেখার বিষয়গুলো সহজবোধ্য, আনন্দময় ও অর্থবহ হয়। এ পদ্ধতিতে শিখন প্রক্রিয়া একটি ধারাবাহিক শিখনচক্রের মধ্য দিয়ে আবর্তিত হয়। এ চক্রের ৪টি ধাপ রয়েছে যথাঃ ১. বাস্তব অভিজ্ঞতা ২. প্রতিফলনমূলক পর্যবেক্ষণ ৩. বিমূর্ত ধারণায়ন ও ৪. সক্রিয় পরীক্ষণ।
যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়ন কী?
এই কারিকুলামের মাধ্যমে প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি অভিন্ন যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। যেগুলো একজন শিক্ষার্থীর মূল শিখন যোগ্যতা হিসেবে বিবেচ্য। এ শিখনযোগ্যতাসমূহ বিষয়বেদে কীরূপ এবং কতটি হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি শিখনযোগ্যতা আবার শিক্ষার্থী এক বা একাধিক পারদর্শিতার মধ্য দিয়ে অর্জন করবে। এগুলোকে পারদর্শিতার নির্দেশক বা Performance Indicator যা সংক্ষেপে PI নামকরণ করা হয়েছে। এই পারদর্শিতাগুলো মূল্যায়নের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ এই ৪টি দিক বিবেচনায় ৩টি সূচকে ফলাফল প্রস্তুত করা হবে। সূচকগুলো হলো ‘পেরেছে’, ‘আংশিক পেরেছে’ এবং ‘পারেনি’। এগুলোকে যথাক্রমে ত্রিভূজ, বৃত্ত ও চতুর্ভুজ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
এক নজরে ৮ম ও ৯ম শ্রেণির নতুন কারিকুলাম
- ৯ম শ্রেণিতে আর হচ্ছে না বিভাগ বিভাজন।
- ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির মতই ৮ম এবং ৯ম শ্রেনিতেও ১০টি একই যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে ১০টি বই থাকছে।
- মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন এবং সামষ্টিক দুই ভাবে। তবে বেশি জোর দেওয়া হবে শিখনকালীন মূল্যায়নে।
- শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের উপর এস এস সি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পরিশেষে বলা যায় আমূলে পাল্টে যাচ্ছে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সকল ধ্যান ধারণা ও কলা কৌশল। আশাকরি তা শিক্ষার্থীদের নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে।