প্রতি বৎসর বিভিন্ন দিনে বিশ্বব্যাপী নানা দিবস পালিত হয়। এর মধ্যে কিছু জাতীয় দিবস রয়েছে। কিছু আন্তর্জাতিক দিবস রয়েছে। এই সকল দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে জাতীয়ভাবে বা আন্তর্জাতিকভাবে সাম্প্রতিককালের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। ক্ষেত্রবিশেষে কোন অতীত ঘটনা স্মরণ বা উদযাপন করা। সাধারণত প্রতিটি দিবসেই প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয় যা দিবসটির ভূমিকাকে সর্বসমক্ষে আরও গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ করে তোলে। এসকল জাতীয় দিবস বা আন্তর্জাতিক দিবস সমূহের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার লক্ষে বিদ্যাঘরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পোস্ট দেয়া হয়। আজকে আমরা ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
ইংরেজি নববর্ষ কি?
প্রকৃতঅর্থে আমরা যে ইংরেজি সাল বা খ্রিস্টাব্দ মেনে চলি তা হলো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হয়। কারন ইংরেজরা এই ক্যালেন্ডার কেই সমর্থন করে। তাই প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে ১জানুয়ারি পর্যন্ত ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হয়। এই দিনটিকে বছরের প্রথম দিন ধরে নানা উৎসবে মেতে থাকে। বেশিরভাগ দেশেই নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব শুরু হয় ৩১ ডিসেম্বর সন্ধে থেকে। উদযাপন চলে জানুয়ারির ভোর পর্যন্ত। নববর্ষের প্রথম দিনের প্রথম আলোয় খাবার খাওয়াকে অনেকেই সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করেন।
ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস
১৫৩ খ্রিস্টপূর্বে প্রথম রোমানরা ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন করেছিল। ঘটা করে ১ জানুয়ারি নববর্ষ পালন শুরু হয় সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন ঘটান। রোমানদের আগের বর্ষপঞ্জিকা ছিল চন্দ্রবর্ষের, সম্রাট জুলিয়াসেরটা হলো সৌরবর্ষের। রোমানদের দরজা ও ফটকের দেবতা ছিলেন জানুস। তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে জানুয়ারি মাসের নাম হওয়ায় জুলিয়াস ভাবলেন নতুন বছরের ফটক হওয়া উচিত জানুয়ারি মাস। সেজন্য জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ পালন শুরু হলো। যিশুখ্রিস্টের জন্মের পর এক খ্রিস্টান পাদ্রি ৫৩২ অব্দ থেকে সূচনা করেন খ্রিস্টাব্দের। রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শ নিয়ে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। এরপর ওই সালেই অর্থাৎ ১৫৮২ তে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারে ১ জানুয়ারিকে আবার নতুন বছরের প্রথম দিন বানানো হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হয়।
যেহেতু প্রাচীন রোমানদের হাতেই এই ক্যালেন্ডারের সৃষ্টি আর তাই ইংরেজী বছরের বারটি মাসের বেশীর ভাগই নামকরণ করা হয়েছে রোমান দেবতা বা সম্রাটের নামানুসারে।
জানুয়ারি-রোমান দেবতা জানো’স এর নামানুসারে ।
ফেব্রুয়ারি-ল্যাটিন শব্দ ফেব্রুয়া থেকে নেয়া হয়েছে, যার অর্থ পবিত্র
মার্চ-রোমানদের যুদ্ধ দেবতা মার্সের নামানুসারে
এপ্রিল-ল্যাটিন শব্দ এপ্রিলিস নামানুসারে, যার অর্থ খোলা
মে-বসন্তের দেবী মায়া’স নামানুসারে
জুন-বিবাহ এবং নারী কল্যাণের দেবী জুনো’র নামানুসারে
জুলাই- রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার-এর নামানুসারে
আগষ্ট-জুলিয়াস সিজারের পুত্র অগাস্টাস সিজারের নামানুসারে
সেপ্টেম্বর-ল্যাটিন সপ্তম সংখ্যা সেপ্টেম এর নামানুসারে
অক্টোবর- ল্যাটিন অষ্টম সংখ্যা অক্টো এর নামানুসারে
নভেম্বর- ল্যাটিন নবম সংখ্যা নভেম এর নামানুসারে
ডিসেম্বর- ল্যাটিন দশম সংখ্যা ডিসেম এর নামানুসারে
ইংরেজি নববর্ষ যেভাবে পালিত হয়
আনুষ্ঠানিকভাবে নিউ ইয়ার পালনের শুরু হয় ১৯ শতক থেকে। এদিন নতুন বছরের অাগমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। বিভিন্ন দেশে নিউ ইয়ার বা নতুন বছরের এ দিনটি পাবলিক হলিডে হিসেবে উদযাপিত হয়। আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আতশবাজির আলোকছটা। আধুনিক বিশ্বে অান্তর্জাতিক নিউ ইয়ার ডে সার্বজনীন একটি ঐতিহ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে দিবসটি বিভিন্ন ভাবে পালিত হয়। লন্ডনে বিগ বেন-এ ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা নাগাদ সংকেত দিলেই টেমস নদীর আকাশ ছেয়ে যায় আতশবাজির ঝলকে। স্কটল্যান্ডের নিউ ইয়ার ইভের নাম হোগমেনেই। এদিন এডিনবার্গের প্রিন্সেস স্ট্রিটে স্ট্রিট পার্টি হয়। গ্রিস ও সাইপ্রাসের নতুন বছর উদযাপনের মাত্রা একটু ভিন্ন। তারা বছর শুরুর রাতে বাতি নিভিয়ে ভাসিলাপিতা (বাসিল পাই) কাটে। এ পাইয়ের ভেতর একটি কয়েন থাকে। যার ভাগ্যে এই কয়েনটি পড়ে সে সারাবছরের জন্য ভাগ্যবান বলে মনে করা হয়।
ফ্রান্সের জনগণ আবহাওয়াকে নতুন বছরের ভবিষ্যতবাণী মনে করে। তাদের মতে আগত বছরের প্রাপ্তি সম্পর্কে আভাস দেয় বাতাস। বাতাস যদি পূর্ব দিকে বয় তাহলে এবছর ফল উৎপাদন ভালো হবে, পশ্চিমে বইলে মাছ উৎপাদন ভালো হবে, উত্তরে বইলে ফসল উৎপাদন ভালো হবে না বলে ধরে নেয় তারা। কানাডা, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডে নতুন বছরের দিন মানুষ সমুদ্রসৈকত বা জলের দিকে ছুটে যায়। পশ্চিমাদেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও বর্তমানে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়। ৩১ ডিসেম্বর ও বছরের শুরুর দিন আয়োজন করা হয় বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট, পার্টি ইত্যাদি। এছাড়াও টেলিভিশন, রেডিও ও বিনোদন মাধ্যমগুলোতে থাকে বিশেষ আকর্ষণ।
রীতি অনুযায়ী জানুয়ারির ১ তারিখে বাংলাদেশে নিউ ইয়ার উদযাপন করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর দিন পেরিয়ে শুণ্য ঘণ্টা থেকে শুরু হয় উৎসব। রাতের এ উৎসবকে বলা হয় ‘ থার্টি ফার্স্ট নাইট ‘। তবে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখন পর্যন্ত ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের তেমন প্রচলন নেই। গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও এ উৎসব উদযাপন হলেও তা খুবই নগণ্য। কিন্তু বড় শহর এ উৎসবের জনপ্রিয়তা বেশ লক্ষণীয়
তথ্য সূত্র
- ইন্টারনেট
- জাতীয় পত্রিকা