সকল পদার্থই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। এই কণাগুলো একে অপরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বলকে আন্তঃকণা বা আন্তঃআনবিক আকর্ষণ শক্তি বলে। এই আকর্ষণ শক্তির প্রভাবে অনুসমূহ একে অপরের সাথে আবদ্ধ থাকে। একইসাথে অনুসমূহের মধ্যে আরও এক প্রকার শক্তি বিদ্যমান যাকে গতিশক্তি বলে। এই গতিশক্তির প্রভাবে অনুসমূহ আন্তঃআনবিক আকর্ষণ শক্তি ছিন্ন করতে চায়।
গতিতত্ত্ব – আন্তঃকণা বা আন্তঃআনবিক আকর্ষণ শক্তি ও গতিশক্তি দিয়ে পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা ব্যাখ্যা করার তত্ত্বকেই কণার গতিতত্ত্ব বলে।
পদার্থের কঠিন অবস্থার ব্যাখ্যা – যখন অনুসমূহের মধ্যে গতিশক্তি কম থাকে তখন অনুসমূহের আন্তঃআনবিক আকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে বেশি কার্যকর থাকে। এ অবস্থায় অনুসমূহ পরস্পরের অনেক নিকটে অবস্থান করে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। এ অবস্থায় অনুসমূহ মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে না। পদার্থের এ অবস্থার নাম কঠিন অবস্থা। দেখা যাচ্ছে কঠিন অবস্থায় –
আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি > অনুসমূহের গতি শক্তি
পদার্থের তরল অবস্থার ব্যাখ্যা – যখন কোন কঠিন পদার্থকে বাইরে থেকে তাপ প্রদান করা হয় তখন অনুসমূহের গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। আর এই গতিশক্তির প্রভাবে অনুসমূহের আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি হ্রাস পায়। এক সময় অনুসমূহের আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি ও গতিশক্তি প্রায় সমান হয়। এ অবস্থায় অনুসমূহ পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্নও হয় না আবার দৃঢ়ভাবেও আবদ্ধ থাকে না। পদার্থের এরূপ অবস্থাকে তরল অবস্থা বলা হয়। ধরে নেওয়া যায় তরল অবস্থায় –
আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি = অনুসমূহের গতিশক্তি
পদার্থের গ্যাসীয় অবস্থার ব্যাখ্যা – যখন তরলকে আরও তাপ প্রদান করা হয় তখন অনুসমূহের গতিশক্তি আরও বৃদ্ধি পায়। একটা সময় এমন অবস্থায় আসে যখন অনুসমূহের গতি শক্তির প্রভাবে এদের আন্তকণা আকর্ষণ শক্তি প্রায় সম্পূর্ণ হ্রাস পায়। এ অবস্থায় অনুসমূহ পরস্পর থেকে অনেক দূরে মুক্তভাবে অবস্থান করে। এ অবস্থায় পদার্থের নির্দিষ্ট কোন আকার আকৃতি থাকে না। পদার্থের এ অবস্থাকে গ্যাসীয় অবস্থা বলা হয়। দেখা যাচ্ছে গ্যাসীয় অবস্থায় –
আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি < অনুসমূহের গতিশক্তি
সাধারণ পরিবেশে এই ৩ অবস্থায় কিছু পদার্থের উদাহরণ- আমরা সাধারণ অবস্থায় প্রকৃতিতে অনেক কঠিন বস্তু দেখে থাকি যেমন – খাতা, কলম, বই, চেয়ার, টেবিল, চক, ডাস্টার, পাথর, গাছপালা, ইত্যাদি। প্রকৃতিতে সাধারণ তাপমাত্রায় অনেক বস্তু তরল অবস্থায় বিদ্যামান যেমন – পানি, তেল, দুধ, পারদ ইত্যাদি। আর গ্যাসীয় বস্তুর উদাহরণ হিসেবে আমাদের বায়ুমন্ডলকেই বলতে পারি যেখানে অনেক পদার্থ গ্যাসীয় অবস্থায় বিদ্যমান যেমন – হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হিলিয়াম, কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদি।