পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন

যার ভর আছে এবং আয়তন আছে তাকে পদার্থ বলে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান পদার্থসমূহকে তিনটি অবস্থা – যথা কঠিন, তরল, বায়বীয় অবস্থায় পাওয়া যায়। পদার্থসমূহকে একটি অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর করা যায়। এর জন্য প্রধান যে নিয়ামক কাজ করে তা হচ্ছে তাপ। তাপ প্রয়োগে পদার্থে গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে পদার্থের অনুসমূহের আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তির পরিবর্তন ঘটে। এ কারণেই পদার্থকে তাপ প্রয়োগ করলে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত করা যায়। এখানে পদার্থের এই রূপান্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তর – কঠিন অবস্থায় পদার্থকে তাপ প্রয়োগ করলে পদার্থের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে এমন একটা তাপমাত্রায় উপনিত হয় যখন পদার্থ আর কঠিন অবস্থায় থাকতে পারে না। নতুন একটি অবস্থায় উপনিত হয়, পদার্থের এই নতুন অবস্থার নাম তরল অবস্থা। কোন পদার্থের কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়াকে গলন বলে। আর যে তাপমাত্রায় কঠিন পদার্থ তরল পদার্থে রূপান্তরিত হয় ঐ তাপমাত্রাকে ঐ পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। অর্থাৎ গলনাঙ্কের থেকে বেশী তাপমাত্রায় পদার্থ তরল অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। যেমন পানির কঠিন অবস্থাকে আমরা বরফ নামে চিনি। বরফের গলনাঙ্ক শূন্য ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাই এই তাপমাত্রা থেকে বেশী তাপমাত্রায় বরফ তরল অবস্থায় থাকে।

তরল অবস্থা থেকে কঠিন অবস্থায় রূপান্তর – তরল পদার্থ থেকে তাপ অপসারণ করতে থাকলে এর তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। তাপমাত্রা কমতে কমতে যখন গলনাঙ্কের সমান হয় তখন এর থেকে আরও তাপ অপসারন করতে থাকলে এটি কঠিন পদার্থে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ গলনাঙ্ক হচ্ছে তরল ও কঠিন অবস্থার মধ্যবর্তী তাপমাত্রা যার থেকে বেশী বা কম হওয়ার শর্তে পদার্থ তরল বা কঠিন অবস্থায় থাকে। তরল পদার্থের এরূপ কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়াকে কঠিনীকরণ বলে।

তরল অবস্থা থেকে গ্যাসীয় অবস্থায় রূপান্তর – তরল অবস্থায় কোন পদার্থকে আরও তাপ প্রয়োগ করতে থাকলে প্রথমে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পেতে এমন এক তাপমাত্রায় উপনিত হয় যখন একে আরও তাপ দিলে এর অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এই তাপমাত্রাকে এই পদার্থের স্ফুটনাংক বলে। স্ফুটনাংক থেকে বেশী তাপমাত্রায় পদার্থের নতুন অবস্থার নাম গ্যাসীয় অবস্থা। পানির স্ফুটনাংক ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রা থেকে বেশী তাপমাত্রায় পানি বাষ্পীয় অবস্থায় বিরাজ করে। পদার্থের তরল অবস্থা থেকে গ্যাসীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে স্ফুটন বলে।

গ্যাসীয় অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তর – কোন পদার্থের গ্যাসীয় অবস্থায় তাপ অপসারণ করতে থাকলে প্রথমে এর তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। যখন এর তাপমাত্রা স্ফুটনাঙ্কের সমান হয় তখন এর থেকে আরও তাপ অপসারণ করলে এটি গ্যাস থেকে তরলে রূপান্তরিত হয়। কোন পদার্থের এরূপ গ্যাস থেকে তরলে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন বলে। অর্থাৎ স্ফুটনাঙ্ক হচ্ছে তরল ও গ্যাসীয় অবস্থার মধ্যবর্তী তাপমাত্রা যার থেকে কম বা বেশী হওয়ার শর্তে কোন পদার্থ তরল বা গ্যাসীয় অবস্থায় বিরাজ করে।

বিশেষ টিকা –

ঊর্ধ্বপাতন – কিছু কিছু পদার্থ আছে যারা কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরিত না হয়ে সরাসরি গ্যাসীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হয়, এদের উদ্বায়ী পদার্থ বলে। যেমন – নিশাদল (NH4Cl), কর্পূর (C10H16O), ন্যাপথালিন (C10H8), কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), আয়োডিন (I2), এলুমিনিয়াম ক্লোরাইড (AlCl3) ইত্যাদি । কোন পদার্থের তাপ প্রয়োগে এরূপ কঠিন অবস্থা থেকে সরাসরি তরলে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ঊর্ধ্বপাতন বলে।

পাতন – কোন তরলকে তাপ প্রয়োগে বাষ্পে পরিণত করে এটিকে পুনরায় শীতলীকরনের মাধ্যমে তরলে পরিণত করার পদ্ধতিকে পাতন বলে। অর্থাৎ ( পাতন = বাষ্পীভবন + ঘনীভবন )

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।