বিশ্ব হিজাব দিবস

প্রতি বৎসর বিভিন্ন দিনে বিশ্বব্যাপী নানা দিবস পালিত হয়। এর মধ্যে কিছু জাতীয় দিবস এবং কিছু আন্তর্জাতিক দিবস রয়েছে। এই সকল দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে জাতীয়ভাবে বা আন্তর্জাতিকভাবে সাম্প্রতিককালের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। ক্ষেত্রবিশেষে কোন অতীত ঘটনা স্মরণ বা উদযাপন করা। সাধারণত প্রতিটি দিবসেই প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয় যা দিবসটির ভূমিকাকে সর্বসমক্ষে আরও গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ করে তোলে। এসকল জাতীয় দিবস বা আন্তর্জাতিক দিবস সমূহের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার লক্ষে বিদ্যাঘরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পোস্ট দেয়া হয়। আজকে আমরা ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব হিজাব দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

হিজাব কি?

হিজাব একটি আরবি শব্দ এর অর্থ আবৃত রাখা। অর্থাৎ একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী তার শরীরের সৌন্দর্য প্রকাশ করে এমন অংশকে ঢেকে রাখাকে হিজাব বলে। ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব হিজাব দিবস পালন করা শুরু হয়। সেই থেকে হাজারো মুসলিম অমুসলিম নারী হিজাব পরে দিবসটি পালন করেন।

হিজাব দিবস কি?

বিশ্ব হিজাব দিবস হলো একটি বার্ষিক কার্যক্রম যা প্রতি বছর পালন করা হয়।কার্যক্রমটি প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী ১৯০ টি দেশে অনুষ্ঠিত হয়। এটি চালু করার উদ্দেশ্য হলো সমস্ত ধর্ম এবং স্তরের নারীদের হিজাব পরিধান এবং অভিজ্ঞতা অর্জনে উৎসাহিত করা।

হিজাব দিবসের ইতিহাস

বিশ্ব হিজাব দিবস সম্পর্কে অনেকেই হয়তো তেমন কিছু জানেন না। বিশ্ব হিজাব দিবস উদযাপনের চিন্তাটা প্রথমে আসে নিউইয়র্ক এর বাসিন্দা নাজমা খান নামে এক নারীর মনে। নাজমা খানের জন্ম বাংলাদেশে হলেও তিনি ১১ বছর বয়স থেকে নিউইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। নানা বিতর্ক মোকাবেলায় বিশ্ব হিজাব দিবসের ডাক দেন নাজমা খান। অমুসলিম ও মুসলিম নারীরা যারা সচরাচর হিজাব পরেন না তাদের অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেন তিনি। দিবসটি পালনের ডাক দেয়ার প্রেক্ষাপট হিসেবে নাজমা জানান তিনি হিজাব মাথায় স্কুলে যাওয়ায় তাকে অনেক অপমান হতে হতো।

মাধ্যমিক স্কুল পড়ার সময় তাকে ব্যাটম্যান এবং নিনজা বলে ডাকা হত। আর আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার পর তাকে ডাকা হতো ওসামা বিন লাদেন এবং সন্ত্রাসী বলে। আরো বলেন স্কুলে  কেবল আমিই  হিজাব পড়তাম। এজন্য নানা বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। তাই সকল নারীরা যদি মাত্র একদিনের জন্য হলেও হিজাব পরেন তাহলে মুসলিম নারীদের আর এ ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হবে না। সামাজিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দিবসটির চেতনা ইংল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ফ্রান্স, জার্মানির মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের ১৯০ টি দেশে দিবসটি পালিত হয়।  

হিজাব দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়

হিজাব নারীকে সম্মানিত ও মর্যাদাশীল করেছে। এর মাধ্যমে ইসলাম নারীর মর্যাদাকে  সমুন্নত করে সমাজের স্বাভাবিক কর্মপ্রবাহকে করেছে মার্জিত ও পরিশীলিত।” নারীর হিজাব পরার পক্ষে দাঁড়ান” আহ্বানকে সামনে রেখে ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী হিজাব দিবস পালিত হয়।

দিবসটি কিভাবে পালিত হয়

নাজমা খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বপ্রথম হিজাব দিবস পালনের পক্ষে প্রচারণা চালানোর পর এটি বিশ্বজুড়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথম বছরেই ৬৭ টি দেশের মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মের নারীরা হিজাব দিবস পালনে অংশগ্রহন করেন। গত বছর ১৯০টি দেশে হিজাব  দিবস পালিত হয়েছিল। অন্য বছরের ন্যায় এ বছরও বিশ্ব হিজাব দিবস অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্ক এর সিটি হলের বারান্দায়।দিবসটিতে বাংলাদেশী, ভারতীয়, আফগান, তুরস্ক, সৌদি আর্‌ব, মিশর ও ইরানের নারীরা হিজাব দিবস পালনের লক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।

নাজমা খানের আহবানে সাড়া দিয়ে মুসলিম নারীরা ছাড়াও, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর হিজাব পরিধানকারী নারীরা দিবসটি পালন করেন দৃষ্টিনন্দন সংস্কৃতি হিসেবে। তবে, বর্তমানে অনেক নারীরা এটি মেয়েদের একটি ফ্যাশন হিসেবে মনে করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হিজাব সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য হিজাব মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হিজাব মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৪ সালে। মেলার আয়োজক ছিলেন মাসজিদ মিশন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। মেলার আয়োজকরা জানান মেলার মূল উদ্দেশ্য ছিল সকলকে শালীন পোশাক সম্পর্কে সচেতন করা ও ইসলামী সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত বাড়ানো।

তথ্য সূত্রঃ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।