পৃথিবীতে মোট ভাষার সংখ্যা প্রায় চার হাজার (নবম-দশম শ্রেণির বইতে – প্রায় সারে তিন হাজার)।
ভাষাকে শ্রেণীকরণের দুটি উপায় রয়েছে। যথাঃ ১. ভাষার রূপতাত্তিক শ্রেণীকরণ। ২. ভাষার বংশগত শ্রেণীকরণ।
রূপতাত্তিক শ্রেনীকরণ – ভাষাগুলোর পরস্পর সম্পর্ক বা প্রচীন ইতিহাস বিবেচনা না করে ব্যাকরণগত ভাবে বাক্য, পদ বিশ্লেষণের মাধ্যমে কেবল ভাষার বাইরের প্রচলিত রূপ বিচার করাকে রূপতাত্তিক শ্রেনীকরণ বলে।
ভাষাতাত্ত্বিকগন রূপতাত্ত্বিক শ্রেণীকরণকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন। যথাঃ – ১. বিশ্লিষ্ট ভাষা। ২. সংশ্লেষণাত্বক ভাষা। ৩. সংসক্ত ভাষা। ৪. বহু সংশ্লেষণাত্বক ভাষা।
বংশগত শ্রেণীকরণ – পৃথিবীতে যে ভাষাগুলোর সন্ধান পাওয়া গেছে এগুলোর অতীত ইতিহাস আলোচনা করে তাদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা হয় যে পদ্ধতিতে তাকে ভাষার বংশগত শ্রেণীকরণ বলে।
এ শ্রেনীকরণ অনুযায়ী পৃথিবীর ভাষাগুলোকে মোট ১২টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- ১. ইন্দো ইউরোপীয়
- ২. সেমেটিক ও হেমেটিক
- ৩. বাল্টো
- ৪. ফিন্নো উগ্রীয়
- ৫. তুর্কী-মঙ্গল-মাঞ্চু
- ৬. ককেশিয়ান
- ৭. দ্রাবিড়ীয়
- ৮. অস্ট্রিক
- ৯. চীনা-তিব্বতিয়
- ১০. প্রাচীন এশিয়
- ১১. এস্কিমো
- ১২. আদি আমেরিকান
আমাদের বাংলা ভাষা ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠির অন্তর্গত। ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাগুষ্ঠীর দুটি শাখা রয়েছে। ১. কেন্তুম ২. শতম।
ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর যে সকল ভাষায় ‘ক’ ধ্বনির উচ্চারণ ‘ক’ এর মতই রয়ে গেছে সে ভাষাগুলো কেন্তম শাখার অন্তর্গত। অপরদিকে যে ভাষাগুলোতে ‘ক’ ধ্বনির উচ্চারণ ‘শ’ বা ‘স’ এর মত হয়ে গেছে সে ভাষাগুলো শতম শাখার অন্তর্গত। এশিয়ার বেশিরভাগ ভাষাই শতম শাখার অন্তর্গত তবে হিত্তিক ও তুখরিক ভাষা দুটি কেন্তুম শাখার অন্তর্গত।
প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বে মধ্য এশিয়ার পশ্চিম এবং ইউরোপের মধ্য ভাগ থেকে দক্ষিণ-পূর্বাংশ পর্যন্ত এক জাতি বাস করতো তারা মোটামুটি একই ভাষায় কথা বলত। এই ভাষার নামই ইন্দো ইউরোপীয় মূল ভাষা।
ইন্দো ইউরোপীয় মূল ভাষা থেকে আধুনিক বাংলা ভাষা পর্যন্ত স্তরসমূহ –
- ইন্দো-ইউরোপীয় – ২৫০০ খ্রিঃ পূঃ
- ইন্দো-ইরানী – ১৮০০ খ্রিঃ পূঃ
- প্রাচীন ভারতীয় আর্য (বৈদিক উপভাষাসমূহ) – ১২০০ খ্রিঃ পূঃ
- মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার প্রাচ্য শাখার বিবর্তন – ৭০০০ খ্রিঃ পূঃ
- প্রাচীন মাগধী – ৩০০০ খ্রিঃ পূঃ
- মগদ অপভ্রংশ – ৮০০ খ্রিঃ
- প্রাচীন বাংলা – ১১০০ খ্রিঃ
- আদি মধ্য বাংলা -১৪০০ খ্রিঃ
- অবার্চীন মধ্য বাংলা – ১৬০০ খ্রিঃ
- নব্য বা আধুনিক বাংলা – ১৮০০ খ্রিঃ
বাংলা ভাষার জন্ম ইতিহাস আরও বিস্তারিতভাবে আলাদা একটি বিদ্যাপাতায় জানাবো। ইনশাল্লাহ।