মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য ভাষা ব্যবহার করে থাকে। বাগযন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই হল ভাষা। গলনালী, মুখবিবর, কন্ঠ, জিহবা, তালু, দাঁত, নাক ইত্যাদি বাক প্রত্যঙ্গকে এক কথায় বাগযন্ত্র বলে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশী ভাষা প্রচলন আছে। সকল ভাষাই বাগযন্ত্রের সাহায্যে সৃষ্ট। তবে একই ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি বিভিন্ন ভাষার কাছে বিভিন্ন রকম হতে পারে। তাই দেশ, কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। কোন মানুষ জন্মসূত্রে তার পরিবেশ অনুযায়ী প্রথম যে ভাষা শিখে থাকে তাকে তার মাতৃভাষা বলে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ত্রিশ কোটি লোকের মুখের ভাষা বাংলা।
যে সকল অঞ্চলের মানুষজন বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকে –
বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের লোকের মুখের ভাষা বাংলা। তবে বাংলাদেশে বসবাসরত অনেক উপজাতী রয়েছে যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়। বাংলাদেশ ছাড়াও আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের অনেক অঞ্চলের মানুষের ভাষা বাংলা। এছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে বাংলা ভাষাভাষী জনগণ বসবাস করে।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি –
পৃথিবীর সকল ভাষার উৎপত্তি আদিম ১২টি ভাষা থেকে। এর মধ্যে ইন্দো-ইউরোপিয় ভাষা একটি। আদিম এ ভাষা থেকেই বাংলা, ইংরেজিসহ এশিয়ার বেশীরভাগ ভাষা তৈরি হয়েছে। বাঙালী জাতির সাথে বিভিন্ন জাতীর মিশ্রণের মাধ্যমে হাজার বছরের ধারাবাহিকতায় মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তীত হয়ে বর্তমান বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে। এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ভাষার শ্রেণীকরণ ও বাংলা ভাষার কালানুক্রমিক ধারা এই পোস্টটি দেখতে পারেন।
বাংলা ভাষার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস –
পৃথিবীর বুকে বাংলাই একমাত্র ভাষা যার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বাঙালী জাতি দীর্ঘ সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল এবং বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে হানাদার জাতির আগ্রাসন থেকে এ ভাষাকে রক্ষা করেছিল। বাঙালী জাতির মাতৃভাষা রক্ষার এ কৃতিত্বকে, সাড়া বিশ্ব প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি এ দিনটিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” পালনের মাধ্যমে সম্মান জানায়।