দৃষ্টি-শক্তিহীনদের জন্য ব্যবহৃত ভাষাকে ব্রেইল ভাষা বলে।
বাক শক্তিহীনদের জন্য ইশার ভাষা।
বাংলা ভাষা
বাংলা ভাষায় কথা বলে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ।
মোট জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলা পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম মাতৃভাষা।
বাংলা ভাষার নিকটতম আত্মীয় অহমিয়া ও ওড়িয়া।
ধ্রুপদী ভাষার সাথে সংস্কৃত ভাষার সম্পর্ক রয়েছে।
পালি ভাষার সাথে বাংলা ভাষার সম্পর্ক রয়েছে।
ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা পরিবার থেকে বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে। যথা – ইন্দো ইউরোপীয় > ইন্দো ইরানিও > ভারতীয় আর্য > প্রাকৃত > বাংলা।
প্রায় এক হাজার বছর আগে পূর্ব ভারতীয় প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষা জন্ম হয়েছে।
বাংলা ভাষার লিখিত রূপের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ।
ভাষার আঞ্চলিক বৈচিত্র্য কে বলা হয় উপভাষা।
বাংলা লিপিতে মোট বর্ণের সংখ্যা ৫০ টি। স্বরবর্ণ ১১ টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯ ট।
প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে উপমহাদেশে ব্রাহ্মী লিপির জন্ম হয়।
ব্রাহ্মী লিপির পূর্ব ভারতীয় শাখা দশম শতক নাগাদ কুটিল লিপি নামে পরিচিত লাভ করে।
বাংলা লিপি কুটিললিপির বিবর্তিত রূপ।
অহমিয়া, বোড়ো, মণিপুরি প্রভৃতি ভাষা বাংলা লিপিতে লেখা হয়।
সংস্কৃত ও মৈথিলি ভাষা একসময় বাংলা লিপিতে লেখা হতো।
ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণ
প্রথম বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৭৪৩ সালে পর্তুগিজ ভাষায়। এর লেখক ছিলেন ম্যানোএল দা আসসুম্পসাউ।
দ্বিতীয় বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৭৭৮ সালে ইংরেজি ভাষায়। এর লেখক ছিলেন নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড। এ বইটির নাম ‘এ গ্রামার অব দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’।
তৃতীয় বাংলা ব্যাকরণ বই প্রকাশিত হয় ১৮০১ সালে ইংরেজি ভাষায়। এর লেখক ছিলেন উইলিয়াম কেরি।
চতুর্থ বাংলা ব্যাকরণ বই প্রকাশিত হয় ১৮২৬ সালে ইংরেজি ভাষায়। এর লেখক ছিলেন রাজা রামমোহন রায়।
পঞ্চম বাংলা ব্যাকরণ বই প্রকাশিত হয় ১৮৩৩ সালে। এটি প্রথম বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বাংলা ব্যাকরণ। এর রচয়িতা রাজা রামমোহন রায়। এই বইটির নাম ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ ‘।
ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়
ভাষার ক্ষুদ্রতম উপাদান হলো ধ্বনি।
ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় চারটি। যথা – ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব ও অর্থতত্ত্ব।
ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় – ধ্বনি, বর্ণমালা সংক্রান্ত যাবতীয়, বাগযন্ত্র, বাগযন্ত্রের উচ্চারণ-প্রক্রিয়া, ধ্বনির বিন্যাস, স্বর ও ব্যঞ্জনধ্বনির বৈশিষ্ট্য, ধ্বনিদল ইত্যাদি।
রূপতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় – শব্দ ও তার উপাদান, বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া, ক্রিয়াবিশেষণ, শব্দ গঠন প্রক্রিয়া ইত্যাদি।
বাক্যতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় – বাক্য, বাক্যের নির্মাণ ও এর গঠন, পদ ও বর্গের বিন্যাস, বাক্যের রূপান্তর, বাক্যের বাচ্য, উক্তি, কারক, বাক্যের যোগ্যতা, বাক্যের উপাদান লোপ, যতিচিহ্ন ইত্যাদি।
অর্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় – বিপরীত শব্দ, প্রতিশব্দ, শব্দজোড়, বাগধারা ইত্যাদি।
বাংলা ভাষার রীতি ও বিভাজন
অধিকাংশ ভাষায় অন্তত দুটি রীতি থাকে ১. কথ্য ভাষারীতি ২. লেখ্য ভাষারীতি। বাংলা ভাষার কথ্য ও লেখ্য ভাষা রীতির রয়েছে একাধিক রূপ।
বাংলা ভাষার কথ্য ভাষা রীতি
কথ্য ভাষারীতির আঞ্চলিক রূপকে উপভাষা বলে। বাংলা ভাষার কয়েকটি উপভাষার নাম – বাঙ্গালি, পূর্বি, বরেন্দ্রি, কামরূপি, রাঢ়ি, ঝাড়খন্ডি।
বাঙ্গালি (বাংলাদেশের মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চল)
পূর্বি (বাংলাদেশের পূর্ব অঞ্চল, ত্রিপুরা ও আসামের বরাক অঞ্চল)
বরেন্দ্রি (বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল)
কামরূপি (বিহারের পূর্ব অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অঞ্চল এবং বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চল।
রাঢ়ি (পশ্চিমবঙ্গ)
ঝাড়খন্ডি (পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অঞ্চল ও ঝাড়খণ্ডের পূর্বাঞ্চল)
লেখ্য ভাষারীতি
লিখিত বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ। প্রায় এক হাজার বছর আগে লেখ্য বাংলা ভাষার কাব্য রীতিতে এটি রচিত।