বর্তমানে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর হতে চলেছে। তাই শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাটা অত্যন্ত জরুরী। বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিদ্যাঘর তথ্য ভান্ডারে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে সকল তথ্য ধারাবাহিক ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমে তথ্য প্রযুক্তির প্রাথমিক ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হলো। তথ্য প্রযুক্তির প্রাথমিক ধারণার অংশ হিসেবে বিদ্যাগুচ্ছের এই পাতাটিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে কি বুঝায়? এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভূক্ত করা হলো।
প্রযুক্তি ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণাঃ
প্রযুক্তি শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Technology। গ্রিক শব্দ Techne (যার অর্থ হলো আর্ট বা শিল্প,কারু কিংবা হাতের দক্ষতা) এবং logia (যার অর্থ হলো শব্দ)। এ দুয়ের সমন্বয়ে টেকনোলজি শব্দটি গঠিত। প্রযুক্তি বলতে কোনো পণ্যের উৎপাদন, সেবার কার্যকারিতা বা বিশেষ কোন উদ্দেশ্য (বৈজ্ঞানিক গবেষণা) সম্পাদনে ব্যবহৃত মেথড, স্কিল এবং টেকনিকের সমষ্টিকে বুঝায়। প্রযুক্তি বলতে সাধারণভাবে কতিপয় কৌশল ও প্রক্রিয়ার সমন্বিত জ্ঞানকে বুঝিয়ে থাকে। এটি যে কোনো মেশিন, কম্পিউটার বা ডিভাইস সংশ্লিষ্টও সংযুক্ত হতে পারে। যার ফলে যে কোন ব্যক্তি এর সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনেও এগুলোকে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। এখন তথ্য প্রযুক্তি বলতে কি বুঝায় ? তথ্য প্রযুক্তি বলতে সাধারণত তথ্য রাখা এবং একে ব্যবহার করার প্রযুক্তিকেই বোঝানো হয়। তথ্য প্রযুক্তি মূলত একটি সমন্বিত প্রযুক্তি যা যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ, অডিও, ভিডিও, কম্পিউটিং, সম্প্রচারসহ আরো বহুবিধ প্রযুক্তির সম্মিলনে দীর্ঘদিন ধরে চর্চার ফলে সমৃদ্ধি লাভ করে তথ্য প্রযুক্তিরুপে আবির্ভূত হয়েছে। সার্বিকভাবে বলতে গেলে কম্পিউটার এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিনিময়কে তথ্য প্রযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
তথ্য প্রযুক্তির জনকঃ
তথ্য প্রযুক্তির জনক হলো ক্লাউডি এলউড শ্যানন (Claude Elwood Shannon)। ১৯১৬ সালের ৩০ এপ্রিল আমেরিকার মিশিগান রাজ্যে তাকে তথ্য প্রযুক্তির জনক হিসেবে অবিহিত করা হয়। তিনি একজন গণিতবিদ। গণিতবিদের পাশাপাশি তিনি একজন ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার এবং ক্রিপ্টোগ্রাফার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ১৯৩৭ সালে এম আই টি এর ছাত্র থাকাকালে মাত্র সাতাশ বছর বয়সে তিনি ডিজিটাল সার্কিট ডিজাইন থিয়োরি আবিষ্কার করেন। ১৯৪৮ সালে ইনফরমেশন থিয়োরি বিষয়ে (A Mathematical theory of Information) নামে তার যে পেপারটি প্রকাশিত হয়, এর কারণেই তাকে আইটি বা ইনফরমেশন টেকনোলজির জনক বলা হয়।
যোগাযোগ প্রযুক্তির ধারণাঃ
যোগাযোগ হলো সাধারণ ভাষায় এক পক্ষের সাথে অন্য পক্ষের মুখোমুখি বা অন্য কোনো উপায়ে সংযোগ ব্যবস্থা। আর যোগাযোগ প্রযুক্তি বা কমিউনিকেশন সিস্টেম হলো কম্পিউটার বা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে ডেটা বা তথ্য আদান প্রদান ব্যবস্থার সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি। এক কথায় যে প্রযুক্তির সাহায্যে নির্ভরযোগ্য উপায়ে উৎস হতে গন্তব্যে ডেটা কমিউনিকেশন প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হতে পারে তাকেই যোগাযোগ প্রযুক্তি বলা হয়ে থাকে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ধারণাঃ
তথ্য প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগ মাধ্যমের রয়েছে নিবির সম্পর্ক।তাই বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলা হয়। বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নীতিমালা অনুসারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হলো যেকোনো প্রকারের তথ্যের উৎপত্তি, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চালন এবং বিচ্ছুরণে ব্যবহৃত প্রযুক্তি। বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির জন্য ২০০৯ সালে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যার নাম তথ্য অধিকার আইন ২০০৯। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী বিশ্বকে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজে পরিণত করা । যার ভিত্তি হবে ব্যাপক তথ্যের অবাধ প্রবাহ।
তথ্যসুত্রঃ
- উইকিপিডিয়া
- জাতীয় পাঠ্যপুস্তক
- জাতীয় তথ্য বাতায়ন (মুক্তপাঠ)